ফেনীতে এক শিশুকে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন

ফেনীতে এক শিশুকে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন

ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীতে একটি শিশুকে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক অভিভাবক।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের বালুয়া চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত রয়েছেন রেহানা ইয়াছমিন রুনা। রুনা থাকেন ফেনী শহরের দাউদপুর সংলগ্ন আরামবাগে।

তিনি যে ভবনে থাকেন ওই ভবনে দোতলায় রয়েছে আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ। তার মেয়ে তাবিবা তাসনিম ওই স্কুলের ছাত্রী। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে তার মেয়ে তাবিবা তাসনিমকে ২০১৯ সালে বালুয়া চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করান। তবে ক্লাশ করে তাদের বাসার একই ভবনে অবস্থিত আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজে।

চলতি বছরের জানুয়ারীতে হঠাৎ করে শিশুটিকে রাজাপুর ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করান। রাজাপুর ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিপুন বৈদ্য তার কলেজ জীবনের বন্ধু হওয়ার সুবাধে এ সুযোগটি করে দেন। নিপুন বৈদ্য প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) সুবিধাভোগীদের তালিকায় তাবিবা তাসনিমের নাম রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন। উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার জন্য তাবিবা তাসনিমকে দ্বিতীয় শ্রেণীর হাজিরা খাতায় শতকরা ৮৫ ভাগ উপস্থিত দেখানো হয়।

এদিকে তাবিবা তাসনিমের নিয়মিত হাজিরা রয়েছে আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজে। দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ছাত্রী প্রতিদিন কিভাবে হাজিরা দেয় এ নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। তাবিবা তাসনিমের বাবা বেলায়েত হোসেন আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। বাবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুটি প্রতিদিন উপস্থিত থাকলেও আবার ফেনী থেকে ২৫ কি: মি: দূরে রাজাপুর ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিভাবে উপস্থিত হয় তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এভাবে একটি শিশুকে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি দেখিয়ে নতুন বই নেয়ায় বই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছর তাবিবা বালুয়া চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি ছিল। চলতি বছর জানুয়ারীতে আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে রাজাপুর ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রাজাপুর ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিপুন বৈদ্য জানান, তাবিবা আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ওই স্কুলের ফলাফলের ভিত্তিতে তাকে উপবৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরামবাগ প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজের এক সহকারী শিক্ষক জানান, তাবিবা তাসনিম এ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: ফিরোজ আহমেদ জানান, একটি শিশু দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে উপবৃত্তি পাওয়ার কোন নিয়ম নেই। এটি বিধি লংঘন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, একটা শিশু দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোন নিয়ম নেই। এতে শিক্ষার্থীর সঠিক হিসাব নির্ণয়ে গড়মিল ও নতুন বই বিতরণে সংকট দেখা দেয়। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।

বিআলো/শিলি