কক্সবাজারে ১৫ দিনে ৬৪৯ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ

কক্সবাজারে ১৫ দিনে ৬৪৯ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ

চঞ্চল দাশগুপ্ত, কক্সবাজার: দীর্ঘ ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে চলছে ইলিশ মাছ ধরার উৎসব। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে কাঙ্ধিসঢ়;ক্ষত পরিমাণ ইলিশ। ফিশিং ট্রলার ভর্তি করে ইলিশ নিয়ে হাসিমুখে কূলে ফিরছেন জেলেরা।

সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় দেশের বৃহত্তম কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে প্রতিদিনই কর্মচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে রূপচাঁদা,মাইট্যা,পোপা,টুনা,লইট্যা,সোরড ফিস সহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। তবে দাম একটু বেশি। বর্তমানে ১০০ ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের একশ ইলিশের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যন্ত। যার ফল স্বরুপ কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় ঘাট সমুহে গত ৩১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পযর্ন্ত ১৫ দিনে ৬৪৯ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে।এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আর কক্সবাজার জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে ৪ আগস্ট থেকে টানা ১০দিনে ইলিশ আহরণ হয়েছে ৩৭৯ টন।

জানা যায়,বঙ্গোপসাগরে থাকা মাছগুলোকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং নির্বিঘ্নে মাছের প্রজনন নিশ্চিত করতে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মৎস্য বিভাগ। গত ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরে মাছধরার ওপর দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। কিন্তু লঘুচাপে সাগর উত্তাল থাকায় ২৩ জুলাই থেকে প্রায় এক সপ্তাহ জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারেনি।যারা গিয়েছিল অনেকের ট্রলারের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

পরবর্তীতে সাগর শান্ত হলে ৩ আগস্ট থেকে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া,টেকনাফ,উখিয়া,পেকুয়া উপজেলার ছোট-বড় ছয় হাজার ট্রলার ইলিশ ধরতে সাগরে নামে। এর পরবর্তী ১৫ দিন সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ আহরণ করে জেলেরা।

জেলেদের মতে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছের প্রজনন বেড়েছে এবং আকার বড় হয়েছে। এখন তারা বেশী মাছ পাচ্ছে। এ বছর দেড় কেজি দুই, আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ধরা পড়ে জালে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এবছর পাইকারিতে এছাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকায়, ১ হাজার গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা জুলফিকার আলী জানান,এ বছর জেলেদের জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়েছে বেশি। যা আগে তারা দেখেননি। যার কারণে দামও পাওয়া যাচ্ছে বেশি। এদিকে ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট থেকে কক্সবাজারে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লে এসময়ে দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় ইলিশ কম আহরণ হয়।আর এ সুযোগে কক্সবাজারের ফিশারিঘাট কেন্দ্রিক মাছ ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম বাড়িয়ে দেয়।

প্রথমদিকে পাইকারিতে একশ ইলিশ বিক্রি হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। যা গত বছর ছিল ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।আর ঢাকাসহ দেশের বড় আড়তদাররা নিরুপায় হয়ে বেশি দামে ইলিশ কিনতে বাধ্য হয়। কিন্তু করোনার লকডাউন পরবতী ঢাকাসহ দেশের খুচরা বাজারে ইলিশের দাম পড়ে যায়। যার কারণে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয় ঢাকার আমদানীকারকরা। এনিয়ে ঢাকার আড়তদাররা কক্সবাজারের ফিশারিঘাট কেন্দ্রিক মাছ ব্যবসায়িদের দোষারোপ করে আগামী বছর ব্যবসা করবে না বলে জানিয়ে দেয়।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো: এহছানুল হক জানান, ৪ আগস্ট থেকে গত ১০ দিনে এ কেন্দ্রে ৩৭৯ টন ইলিশ সহ ৫৪৪ টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হয়েছে। এ থেকে তাদের টোল আদায় হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তিনি আরও জানান, এখন সাগরে ডালা পড়ে গেছে। যার কারণে ইলিশ মাছ এখন কম ধরা পড়বে। সামনের পূর্ণিমার জোতে আবারও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান বিপ্লব বলেন, আগে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সচরাচর সে রকম মাছ পাওয়া যায় না। প্রজননকালীন সময়েও সাগরে মাছ শিকার এর অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, মাছ ধরার উপর সরকার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে কিন্তু সুফল আসতে শুরু করেছে। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে সাগর মৎস্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আরো সুফল আসবে।

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ দিনে ৬৪৯ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে।এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন ইলিশ। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে যে হারে ইলিশ ধরা পড়ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।

বিআলো/শিলি