ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সফলতার দুই বছর

ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সফলতার দুই বছর

সুমন সরদার: সততা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতার মাধ্যমে পুলিশি সেবা নিশ্চিত করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানবিক পুলিশ অফিসার হিসেবে সর্বজন নন্দিত হয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম (বার)। ২০১৯ সালের ২৪ মে ঢাকা রেঞ্জের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।

এরই মধ্যে গত ২৪ মে ২ বছর পূর্ণ করেন । মেধা ও দক্ষতায় অন্যরকম এক মানবিক পুলিশ বাহিনী দেখল বাংলাদেশ। উনার নানান উদ্যোগের কারণে বদলে যেতে থাকে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশি কার্যক্রম। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানা মনিটর করার উদ্যোগ নিয়ে আরো বেশি জনবান্ধব পুলিশিংয়ের নজির স্থাপন করেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

থানা-পুলিশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানায় বসান ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও নিরাপত্তারক্ষীর অবস্থান। থানা মনিটরিংয়ের কাজ চলে ২৪ ঘণ্টা।

চাইলে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ক্যামেরাগুলো ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়েও আশপাশের দৃশ্য দেখা যায়। কর্মকর্তারা জানান, থানার গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্ব্যবহার করাসহ ক্ষেত্রবিশেষে আসামি বা তার স্বজনদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আসে।

এছাড়া নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কি না, ডিউটি অফিসারের কক্ষে একই লোক বারবার আসছে কি না, সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে সেন্ট্রি কেমন আচরণ করছেন, সেন্ট্রি রাতে কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ভেতরে বসে আছেন কি না ইত্যাদি বিষয় মনিটরিং করা হয়।

ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে মানবিক পুলিশ হতে অনুপ্রাণিত করেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। নিজের জীবন বা পরিবারের কথা চিন্তা না করে দিনরাত রাস্তায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হওয়ার পর মানুষের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে, কোনো সমস্যা তৈরি হলে ফোন করলেই মুহূর্তেই পুলিশ হাজির হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত ব্যবস্থাও নিচ্ছে।

২৪ ঘণ্টাই জনগণ যেকোনো জরুরি সেবাগ্রহণ করতে পারছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু প্রচলিত কথাটি বর্তমান সময়ে বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী প্রশংসনীয় উদ্যোগ, কর্মতৎপরতা, মহানুভবতা, কঠিন এই বিপদে ঝাপিয়ে পড়া, প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া বাঙালি জাতির জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। পেশাগত ও মানবিক কাজের বাইরে সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সাভারে বেদে পল্লীর সমাজ ব্যবস্থা উন্নয়ন থেকে শুরু করে স্কুল, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বুটিক হাউজসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের আত্ন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেদে পল্লীর অভিশপ্ত বাল্যবিবাহ রোধে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয় দেশে-বিদেশে। নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত পিছিয়ে পড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘উত্তরণ কর্ম-সংস্থান প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচি চালু করেন এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উত্তরণ, তাদের পুনর্বাসন ও মানুষ হিসেবে তাদের সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত করতে সাড়া জাগানো বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন।

যে কারণে এই দুই জনগোষ্ঠীর কাছে তার পরিচয় মানবতার ফেরিওয়ালা। সে সময়ে তার উদ্যোগে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজারবাগে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান ও ঢাকায় তাদের প্রথম প্রতিরোধ নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামের একটি বই-ও লিখেছেন হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর থেকেই কর্মক্ষেত্রে নিজের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। সাহস, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হয়েছেন তিনি।

বিআলো/ইলিয়াস