কৃঞ্চচূড়ার রক্তিম আভায় চেয়ে গেছে  কুবি ক্যাম্পাস

কৃঞ্চচূড়ার রক্তিম আভায় চেয়ে গেছে  কুবি ক্যাম্পাস

হাবিবুর রহমান, কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বাহারি রঙের কৃঞ্চচূড়ায় চেয়ে গেছে।  গ্রীষ্মের কড়া রোদে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় সুজলা সুফলা প্রকৃতি সেজেছে এক বর্ণিল সাজে। চারপাশে কৃষ্ণচূড়ার বাহারি রঙ দেখে মনে পড়ে  যায় 'কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে।'

লাল পাহাড়ে সবুজ ক্যাম্পাস খ্যাত কুমিল্লা  বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উঁচু-নিচু টিলা, আর আঁকাবাঁকা পথ। চারদিক সবুজের সমারোহ।  টিলার ফাঁকে ফাঁকে সুউচ্চ দালান এবং ঐতিহাসিক ভাস্কর্য। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে পুরো ক্যাম্পাস। কিন্তু সম্প্রতি পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটে যায়। তারই ফাকে কৃঞ্চচূড়া তার আপন মহিমায় সাজিয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। 

কুমিল্লা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান।প্রাচীন শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে তৈরি করা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুধু নিছক একটা বিদ্যাপীঠই নয়, এর রয়েছে ঐতিহাসিক এবং সামগ্রিক ও প্রাকৃতিক তাৎপর্য। আর তাই ধীরে ধীরে এ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছে সমগ্র দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ।

কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)। এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ফ্যাবেসি (Fabaceae)পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচুড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

ক্যাম্পাস জুড়ে দেখা যায়, মূল ফটক থেকে প্রবেশ করে গোল চত্বর, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন অনুষদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃঞ্চচূড়া রোড় ও শহীদ মিনার পর্যন্ত মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়েছে কৃঞ্চচূড়া। 

গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপের পর বিকেলে যখন হালকা ঠান্ডা নেমে আসে তখন  ক্যাম্পাসে কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে ছবি তুলতে ছুটে আসে অজস্র তরুণ-তরুণীরা। কেউ নীল শাড়ি, নীল পাঞ্জাবি আবার কেউ বিভিন্ন রকমের জামা পড়ে ছূটে আসে।  এসব ছবি কেউ ফ্রেম করে রেখে দেন, আবার কেউ পোস্ট করেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কৃঞ্চচূড়া ফুলের সৌন্দর্য অবলোকন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত জেরিন বলেন, 'পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে কৃঞ্চচূড়া ফুল গাছ  থাকায় একদিকে যেমন মুক্ত বাতাস পাওয়া যায়, অন্যদিকে এর ছায়াতলে বিশ্রামও নেয়া যায়। কৃঞ্চচূড়ার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। এই মুগ্ধতাই আমি রোজ নিজেকে হারিয়ে ফেলি। সৌন্দর্যমণ্ডিত এসব গাছগুলোর আরো পরিচর্যা করা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব  তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, 'কৃঞ্চচূড়া প্রকৃতির  এক বড় নিয়ামত। যার সৌন্দর্যের কোন সীমা পরিসীমা নেই। এই সৌন্দর্য যতই দেখি ততই ভাল লাগে। মনে হয় প্রকৃতি যেন লাল গালিচায় চেয়ে গেছে। আমার প্রত্যাশা, সারাবছরই যেন কৃঞ্চচূড়া তার আপন সৌন্দর্য ক্যাম্পাসে প্রসারিত করুক।'

বিআলো/শিলি