সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ‘বাক্যদূষণ’ ইদানীং মহামারির পর্যায়ে : রিজভী

সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ‘বাক্যদূষণ’ ইদানীং মহামারির পর্যায়ে : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগনের ঘাড়ের ওপর দৈত্যের মতো চেপে বসা নিশুতি সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ‘বাক্যদূষণ’ ইদানীং প্রায় মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। বেপরোয়া দুর্নীতি-দু:শাসন-গুম-খুন-লুটপাট আর অর্থ পাচার করতে করতে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন তারা।


শুক্রবার ( ৭ অক্টোবর) বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের নেত্রীকে তুষ্ট করতে, একটু কৃপার লোভে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অশোভন সন্ত্রাসি ভাষায় বক্তব্য বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে সীমা লংঘন করে চলেছেন। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে-‘গোড়ায় গলদ’। নিশিরাতের গর্ভে জন্ম নেয়া এই সরকারেরও গোড়ায় গলদ আছে। রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট ডাকাতি করে জন্ম নেয়ায় সরকারকে ঘিরে রয়েছে লুটেরা, চোর, ডাকাত, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসি, খুনি ও চাপাবাজ গোষ্ঠী। নিশিরাতের এই সরকারের দিবানিদ্রায় থাকার জন্য বেয়াদবি, মিথ্যাচার আর অপপ্রচার এখন তাদে মজ্জাগত হয়ে পড়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়েও এমপি, মন্ত্রী হওয়ায় এদের অনেকেই রাজনীতি বোঝেনা। বোঝেনা শিষ্টাচার, ভদ্রতা, ভব্যতা, আচার আচরণ ও কথাবার্তা।


তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কেবল মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পক্ষেই সম্ভব। রাতে ব্যালটে সীলমারা অটো ভোটের বিতর্কিত এই প্রতিমন্ত্রী সন্ত্রাসিদের মতো কুৎসা গাইছেন। ভোট ডাকাতদের মুখেই এধরণের কথা মানায়। ক্ষমতার সুখে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে এখন ‘কাকস্য পরিবেদনা’র মধ্যে রয়েছে।

এই বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা হতবাক হয়ে গেছেন। এটা কি কোন সভ্য দেশের মন্ত্রীর মুখের ভাষা হতে পারে ? মনে হয়েছে গলির সন্ত্রাসী মাস্তানের হুংকার। বস্তির অশিক্ষিত বোহেমিয়ান গালিবাজদের খিস্তি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, এই ধরনের লোকরাও এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন !


বিএনপির এই নেতা বলেন, একজন মন্ত্রীর কথা-বার্তায় শালীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ রাতের আঁধারে তারা ভোট চুরি করে হোক আর লুট করে হোক মন্ত্রী হয়ে গেছেন। তাদের কাছে নতুন প্রজন্মের নাগরিকরা শালীন ও শিষ্টাচার, উদাহরণমুলক আচরণ, কথাবার্তা শুনতে চায়, দেখতে চায়। কিন্তু তাদের এ কেমন আচরণ, কথাবার্তা!
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এর আগে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু ৫ মাসও টিকতে পারেননি সেখানে। চিকিৎসকদের নিয়ে অসংলগ্ন, অশোভন ও বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে তাদের দলীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএম) আন্দোলনের মুখে তার পলায়নপর অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন তার নেত্রী শেখ হাসিনা লাগামছাড়া, উস্কানিমূলক, অসংলগ্ন ও ভারসাম্যহীন বক্তব্য বিবৃতির উপযুক্ত মন্ত্রনালয় তথ্য ও সম্প্রচারে তাকে স্থানান্তরিত করেন। তিনি শুধু বিএনপি নেতানেত্রীদেরকেই নিয়েই নয়, গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন, গালাগালি করছেন।


রিজভী আহমেদ বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মুরোদ জনগণের জানা আছে। পুলিশ প্রশাসন দলীয় গুন্ডা -পান্ডা দিয়ে রাতের অন্ধকারে ব্যালটে সীল মেরে ভোট ডাকাতি করে অটো পাসের মতো এমপি মন্ত্রী হওয়া যায়। কিন্তু জনগণের ভোট দেয়ার সুযোগ অবারিত থাকলে এই লোকটি নিজের এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারবে কিনা সন্দেহ। সেই ব্যক্তি যখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে বেয়াদবের মতো উক্তি করে তখন আর কিছু বলার নেই।


তিনি বলেন, আজ হোক আর কাল হোক জনগণের মুখোমুখী হতেই হবে। দুর্নীতি লুটপাটে দেশ ও জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়েছেন। অর্থনীতি ফোকলা করে ফেলেছেন। এই করোনা মহামারিতে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এর মধ্যে ই-কমার্সের নামে ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান, নানা নামে, নানা রংয়ে-ঢংয়ে কোন আইনের ভিত্তিতে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করলো-সেই হিসেব করুন। কেন দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও দুর্নীতি মুক্ত থাকতে পারেনি ? নিশিরাতের সরকারের আমলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই কেন দুর্নীতিকেই নীতি মনে করে -সেই হিসেব বের করুন। খোদ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘নগদ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নগদ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। নিশিরাতের সরকারের প্রতি আহবান, বাঁচতে চাইলে এখনো সময় আছে, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চান।

বিআলো/শিলি