অটিস্টিক শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা ও ঈদ উপহার দিয়ে বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করলো (বিএএফ)
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ অটিস্টিক শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা ও ঈদ উপহার বিতরণের মাধ্যমে বেইট আলফা অটিস্টিক ফাউন্ডেশন (বিএএফ) এর ১৭ তম বিশ্ব অটিজম দিবস পালিত হয়েছে। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা।
এ উপলক্ষে গতকাল ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে এক আলোচনা সভা এবং অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বেইট আলফা অটিস্টিক ফাউন্ডেশন । চিত্রাঙ্কণ শেষে প্রায় দুই শতাধিক অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের হাতে বিভিন্ন রঙের খেলনা পুতুল এবং ঈদের পোশাক বিতরণ করা হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নাট্যব্যাক্তিত্ব ও আলোকচিত্রী শঙ্কর শাওজাল বলেন, অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটি আলাদা জায়গা প্রয়োজন। যেখানে তারা নিজেদের ভাবনা আদান-প্রদান করতে পারবে। পাশাপাশি তিনি অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করার বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরে সমাজের বিত্তবান ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে শিখেছি যে, কি ভাবে শিশুদের দৈনন্দিন জীবন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এজন্য অটিস্টিক শিশুদের ন্যূনতম মৌলিক কাজ শেখাতে হবে। আজকের এই শিশুদের চিত্রাঙ্কণ আয়োজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগার বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়গুলোর একটা তালিকা করে পরিবারের সব সদস্য এবং স্কুলের শিক্ষক, প্রশিক্ষককে জানাতে হবে।
অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, শিশুরা স্বাধীন ভাবে রঙের সাথে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সহোযোগিতা করে। তাই তাদের জন্য আমাদের আরো অনেক সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ অতিথি নোঙর ট্রাস্ট চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের শারিরীক আঘাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের প্রতি সুন্দর সহজ, সরল ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। অটিস্টিক শিশুকে অবহেলা না করে তাদেরকে সেবাযত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সক্ষম ও কর্মক্ষম করে তোলা সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।
আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা অনুষদের অধ্যক্ষ শিল্পী সামছুল আলম, ডিজাইনার শাহরীন হক, ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর জনাব কাজল আরেফিন অমি, অভিনেতা এবং ডাক বাক্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি জিয়াউল হক পলাশ।
চিত্রাঙ্কণ কর্মশালা পরিচালনা করেন চিত্রশিল্পী আশরাফুল কবির কনক। সমন্বয় করেছেন বেট আলফা অটিস্টিক ফাউন্ডেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক জনাব রকিব হাওলাদার, ফাউন্ডেশনের পরিচালক নোমিরা আহমদ এবং ফাউন্ডেশনের কার্যকরি সদস্য নাজিফা মিলা। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আরমিন সোমা এবং সহ-সভাপতি জনাব রোমেল মোর্শেদ।
সুত্র জানায়, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের শারিরীক আঘাত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের প্রতি সুন্দর সহজ, সরল ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। অটিস্টিক শিশুকে অবহেলা না করে তাদেরকে সেবাযত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সক্ষম ও কর্মক্ষম করে তোলা সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।’
সুত্র আরও জানায়, অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এক সময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যু। এ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও স্কুল সাইকোলজিস্ট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে এ বিষয়ে দেশে কাজ শুরু করেন। এ অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তার বিরাট অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছেন। বর্তমানে সায়েমা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিআলো/নিউজ