• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ
    • যোগাযোগ
    • অভিযোগ
    • ই-পেপার

    অধীনস্থদের সাথে যেমন ছিলেন মহানবী (সাঃ) 

     dailybangla 
    03rd Oct 2024 11:58 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    সুন্দর এই পৃথিবীতে সব মানুষ এক রকম নয়। এখানে একেক জন মানুষ একেক প্রকার বৈশিষ্ট্য নিয়েই আমাদের এই সমাজে বসবাস করে। মূলত আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে পরীক্ষা করার জন্যই মানুষকে পাঠিয়েছেন। এখানে যে ভালো আমল সংগ্রহ করতে পারবে, আল্লাহর কাছে সেই উত্তম বলে বিবেচিত হবে এবং জান্নাত পাবেন। আর যিনি ভালো আমল সংগ্রহ করতে পারবেন না তিনি জাহান্নাম পাবেন।

    আমাদের পার্থিব জীবনে সহজভাবে বেঁচে থাকার জন্যই প্রয়োজন হয় অন্যের সহযোগিতা। আমরা সমাজবদ্ধ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবেই কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দিতে হয়। অনেকে বাসা-বাড়িতেও কাজের লোক নিয়োগ দিয়ে থাকেন নিত্যকাজে সহযোগিতার প্রয়োজনে। এরা যৎসামান্য বেতনের বিনিময়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেন।

    কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যদি এদের থেকে কোনো ভুল সংঘটিত হয়ে যায়, তা হলে ধমক-তিরস্কার কপাল ঘোছানো বকাঝকা সহ্য করতে হয় তাদের। বিশেষ করে শিশু মেয়েদের ওপর চলে অকথ্য ও অমানবিক নির্যাতন। অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর হাতে উত্তপ্ত খুন্তি দিয়ে শরীরে ছ্যাঁকা দেওয়ার ঘটনাও প্রকাশিত হয় পত্রিকার পাতায়। এমনকি নিষ্ঠুরতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে মেরে ফেলার মতো রেকর্ডও শোনা যায় কোথাও কোথাও।

    অথচ রাসুল (সাঃ)-এর আদর্শ হলো, অধিনস্থদের সঙ্গে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ ও মানবিক আচরণ করা। তারা বড় ধরনের কোনো ভুল করে বসলে মমতার সঙ্গে সতর্ক করে শুধরে দিতেন আর ছোট ভুল প্রকাশ পেলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন।

    হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (সাঃ)- এর ঘরের ও বাইরের নানা কাজ করেছেন। তার সঙ্গে রাসুল (সাঃ)-এর আচরণ কেমন ছিল সে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মদিনায় ১০ বছর রাসুল (সাঃ)-এর খেদমত করেছি। আমি ছিলাম অল্পবয়স্ক বালক। আমার সব কাজ রাসুল (সাঃ)-এর মর্জিমাফিক হতো না। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তিনি কখনো আমাকে ধমক দেননি এবং বলেননি যে, এটা কেন করেছ বা এটা কেন করোনি।’ (আবু দাউদ : ৪৭৭৪)

    আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা আয-যুখরুফ, ৩২ নাম্বার আয়াত বলেনঃ اَهُمْ یَقْسِمُوْنَ رَحْمَتَ رَبِّكَ١ؕ نَحْنُ قَسَمْنَا بَیْنَهُمْ مَّعِیْشَتَهُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ رَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِیًّا١ؕ وَ رَحْمَتُ رَبِّكَ خَیْرٌ مِّمَّا یَجْمَعُوْنَ

    তোমার রবের রহমত কি এরা বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন-যাপনের উপায়-উপকরণ আমি বণ্টন করেছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু সংখ্যক লোকের ওপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি, যাতে এরা একে অপরের সেবা গ্রহণ করতে পার। (এদের নেতারা) যে সম্পদ অর্জন করছে তোমার রবের রহমত তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

    অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফছিরে ফি যিলালি কোরআনে বলেনঃ ওরা তোমার পালনকর্তার রহমত বন্টন করতে চায়? কি অদ্ভুত ব্যাপার, তোমার পালনকর্তার রহমতের সাথে ওদের কী সম্পর্ক? ওরা নিজেরাই তো নিজেদের কোনো কিছুরই মালিক নয়। ওরা তো নিজেদের জীবিকার যোগানই দিতে পারে না। এমনকি পৃথিবীর বুকে তারা যে সামান্য জীবিকার মালিক বনে আছে সেটাও আমি দিয়েছি। এই জীবিকা আমিই দিয়েছি বিশেষ নিয়মের অধীনে এবং পরিমাণমত বন্টন করেছি শুধু পৃথিবীটা আবাদ করার জন্যে, এই জীবনের বিকাশের জন্যেই আমার এই ব্যবস্থা।

    একজন শ্রমিক যখন কাজ করে তখন তার এই কাজ হয় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং মালিকের জন্যে শিক্ষক যখন কাজ করেন তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য। ওদিকে প্রকৌশলী যখন কাজ করে, তখন তার এই কাজ হয় শ্রমিকের জন্যে এবং মালিকের জন্যে। আবার মালিক নিজে যখন কাজ করে, তখন তার এই কাজ হয় শ্রমিকের জন্যে এবং প্রকৌশলীর জন্যে। মোটকথা, শ্রমিক, মালিক, শিক্ষক এবং প্রকৌশলী প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্যে কাজ করছে। এদের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজ থেকে সেবা গ্রহণ করছে। আর এভাবেই তারা সকলেই পৃথিবীর চাকা সচল রাখছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রতিভা ও যোগ্যতার তারতম্যের কারণে, অনেকটা জীবিকা ও কাজের তারতম্যের কারণে।

    হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, মারূর ইবনু সুওয়াদা (রহ) বলেন, একবার আমি আবুজর গিফারি (রাঃ)-এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর তার ক্রীতদাসের গায়েও (অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নবী (সাঃ) এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নবীজি (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বললেন তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন, কাজেই কারও ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোনো কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোনো কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর। (সহিহ বুখারি: ৬০৫০)।

    আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৩৬ নাম্বার আয়াত বলেনঃوَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ١ۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ

    তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো, কোনো কিছুকেই তাঁর সাথে অংশীদার বানিয়ো না এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, (আরো) যারা (তোমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, (তোমার) পথচারী সংগী ও তোমার অধিকারভুক্ত (দাস দাসী, তাদের সবার সাথেও ভালো ব্যবহার করো), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক।

    অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রত্যেক মানুষকেই জিজ্ঞাসিত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা রক্ষণাবেক্ষণকারী স্বরূপ এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে। শাসক তার লোকজনের রাখাল স্বরূপ, তাকে তার শাসিতদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। গৃহকর্তা তার গৃহবাসীর রাখাল স্বরূপ, তাকে তার গৃহবাসীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। দাস তার মনিবের সম্পদাদির রাখাল স্বরূপ, তাকে তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মনে রাখবে, তোমাদের প্রত্যেকেই (কোন না কোনভাবে) রাখাল স্বরূপ এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সহিহ বুখারি: ২৫৫৮)।

    এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ফুটে উঠেছে যে অধিনস্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেসা বাদ করা হবে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অধিনস্ত ব্যক্তি ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। যার অধিনে থাকবে তিনি তাকে সংশোধন করে দিবে সুন্দর ভাষা ও ব্যবহারে মাধ্যেমে যে ভাবে রাসুল (সাঃ) তার অধিনস্তদের সংশোধন করে দিতেন।

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অধীনস্থদের নিজেদের ভাই হিসেবে উল্লেখ করে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দিতেও নিষেধ করেছেন।

    লেখকঃ শিক্ষক, তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, নারায়গঞ্জ শাখা

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2024
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    252627282930