অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নদী রক্ষায় নোঙরের ৯ দফা দাবি
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে নদী রক্ষায় নদীসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করাসহ ৯টি দফা দাবি জানিয়েছে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’।
আজ, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘আন্তঃসীমান্ত নদীতে বাংলাদেশের অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের চেয়ারম্যান সুমন শামস।
অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে নোঙরের ৯ দফা দাবি হলো:
দেশের স্বার্থে ‘জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭’ অনুসই করার মাধ্যমে সব অভিন্ন নদীর বাধা অপসারণ করে ফারাক্কা-তিস্তাসহ ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ব্যবহারের চুক্তি সই করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ মতে ১৯৪০ সালের সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, ড্যাপ, পরিবেশ এবং জলাধার আইন মোতাবেক সব নদী, খাল, পুকুর, হাওর বাওর, জলাধার, সংরক্ষণ করতে হবে।
ধলেশ্বরী নদী থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর উৎস মুখের গড়ে তোলা মধুমতী মডেল টাউন উচ্ছেদ করে নৌপরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সমুদ্র-পাহাড়, বনভূমি, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়, নদ-নদী দখল-দুষণকারী, বালুখেকো, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
দেশের নৌপথে নিহত সব (প্রায় ২০ হাজার) শহীদের স্মরণে ‘২৩ মে, জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক ৩৭ হাজার নদী দখলদারদের মুছে দেওয়া তালিকা প্রকাশ করে সব দখল উচ্ছেদ করতে হবে।
রাজধানীর নড়াই নদীর ওপর রামপুরা ব্রিজ-ফ্লুইচ গেটসহ গুলশান, হাতিরঝিল, পান্থপথ, ধানমন্ডি লেক, পিলখানা থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত নৌপথ সচল করতে হবে।
রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া ৪৭টি খালসহ সারা দেশের নদ-নদীর ওপর স্বল্প উচ্চতার সেতু অপসারণ এবং দেশের সব খালের ওপর নির্মিত কালভার্ট উচ্ছেদ করে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
এবং নদী রক্ষায় নদীসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করে নদীকর্মী ও পরিবেশকর্মীদের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি প্রদান এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সেমিনারে দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাইদ খান বলেন, নদীমাতৃক আমাদের দেশ, নদীকেন্দ্রিক আমাদের জীবন, আমাদের সভ্যতা। এই সভ্যতাকে সমুন্নত রাখতে আমাদের ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। আমরা যেহেতু সমুদ্রের সীমানা টানতে পেরেছি তাহলে আমাদের নদীর ক্ষেত্রেও সেটা করতে হবে।
রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদী কী কেবল তিস্তা? শুধু তিস্তা না, আমাদের সব নদীর হিস্যা দাবি করতে হবে। শুধু তিস্তা হলেই হবে না। সবখানে বলা হয় আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। কিন্তু অভিন্ন নদী আছে ১২৩টি। সবগুলো চুক্তিতে নেই। তাই আমাদের সব নদীর জন্য চুক্তি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠনিকভাবে ও রাজপথে নদীর চুক্তি সইয়ের জন্য আন্দোলন করেছেন, লিখেছেন, গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে চার জন ব্যক্তি এখন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এখন তারা সরকারে আছে। তারা করুক। আমরা এই সরকারের কাছে এই দাবিটা জানাই।
নদীর নাব্যতা ঠিক করার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, আমরা আমাদের পরিবেশকে বিকৃত করে কোনও উন্নয়ন চাই না। একইসঙ্গে আমাদের নদীর নাব্যতা ঠিক করতে হবে। আর আমরা যাতে দুর্যোগের পূর্বাভাস আগে থেকে পাই সেটাও খেয়াল করতে হবে।
বিআলো/নিউজ