অবশেষে বদলি হলেন বোয়ালিয়া মডেল থানার বিতর্কিত ওসি মেহেদী মাসুদ!
নজরুল ইসলাম জুলু: মাত্র ৫ মাসও টিকতে পারলেন না রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মেহেদী মাসুদ। গত ৫ মাসে বিভিন্ন বিতর্কের সাথে জড়িত এই ওসির অবশেষে ৫মার্চ (বুধবার) দুপুরে বিদায় ঘন্টা বেজে ওঠে। বুধবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ(আরএমপি) কমিশনার জনাব মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান এর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ অনুযায়ী তাকে বোয়ালিয়া মডেল থানা হতে আরএমপি গোয়েন্দা শাখায় পদায়ন করা হয়। একই আদেশে নগর বিশেষ শাখার (সিটি এসবি) পরিদর্শক মোস্তাক আহম্মেদকে বোয়ালিয়া থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনারের অফিস আদেশে বলা হয় সন্ধ্যার মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে মেহেদী মাসুদ কে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যা নাগাদ মেহেদী মাসুদ মোস্তাক আহম্মেদের কাছে দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন। আপাতত মেহেদী মাসুদ মহানগর ডিবিতে পদায়ন হলেও তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সেখানেও তিনি টিকতে পারবেন কিনা এ নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ৪মার্চ (মঙ্গলবার) রাতে একদল ক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালিয়া মডেল থানা ঘেরাও করেন। তাদের অভিযোগ, তারা ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর হামলা করা আওয়ামী সন্ত্রাসী শাকিলকে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে ওই আসামিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে আদালতে চালান দেয়। ওই আসামি সেদিনই জামিন পেয়ে জেল থেকে ছাড়া পান। বিক্ষুব্ধ লোকজন এই ঘটনার জন্য বোয়ালিয়া থানা পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করেন। পাশাপাশি ওই আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান তারা। রাতে পুলিশ অবশ্য তাকে আবার গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছিল। এর পরদিনই বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ কে বদলি করে ডিবিতে পদায়ন করা হয়। তবে রাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই বদলি কি না, জানতে চাইলে আরএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আসলে বিষয়টা ঠিক ওই রকম না। প্রশাসনিক কারণে বদলিটা হয়েছে। যে কর্মকর্তা যেখানে ভালো কাজ করবেন, তাঁকে সেখানেই দেওয়া হয়। আর ওই আসামিকে গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আরএমপি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক আদেশে মো: মেহেদী মাসুদকে অফিসার ইনচার্জ হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় পদায়ন করা হয়েছিল। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন কালে মেহেদী মাসুদের বিরুদ্ধে বিগত ৫ মাসে অনেক গুরুতর অভিযোগ উঠে।
সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, ২০০৫ সালের এসআই ক্যাডেট হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করা ইন্সপেক্টর মো: মেহেদী মাসুদ বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দির সন্তান। বগুড়ার সন্তান হওয়ার সুবাদে তদবির করে তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানার দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়েই তিনি তার উপর অর্পিত কর্ম সম্পাদন করতে একের পর এক স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। ধর্তব্য অপরাধ হলেও মামলা না নেয়া,খারাপ খারাপ এস আই, এ এস আই এবং কনস্টেবলদের বোয়ালিয়া থানায় পোস্টিং করিয়ে তাদের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার একাধিক অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে । এদের মধ্যে কারো কারো বদলী হয়ে গেলেও পুলিশ কমিশনারকে বলে তিনি স্বপদে বহাল থেকেছেন। মেহেদী মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি বেশ লম্বা। বোয়ালিয়া মডেল থানায় দ্বায়িত্ব পালন কালে কথায় কথায় মিথ্যা বলা, অহংকার ও অহমিকা দেখানো তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়।
অভিযোগ রয়েছে দিনের পর দিন বোয়ালিয়া থানায় ঘোরাঘুরি করেও ধর্তব্য অপরাধে মামলা করতে পারেননি শতাধিক ব্যক্তি যারা উপায়ান্তর না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। ৫ ই আগস্ট এর অনেক মামলা তিনি রেকর্ড না করে ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া, আবার যেসব মামলা রেকর্ড হয়েছে সেগুলোতে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে । এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন স্বৈরাচারী দোসর ও আওয়ামী নেতাকে বাড়তি মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
এইদিকে বিতর্কিত ওসি মেহেদী মাসুদ এর বোয়ালিয়া মডেল থানা হতে বদলির খবরে ভুক্তভোগী জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে উৎফুল্লতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে মেহেদী মাসুদের ছবি দিয়ে তার বদলির খবরে আনন্দে প্রকাশ করেন এবং তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, মামলা না নেওয়া, খারাপ ব্যবহার করা, মামলার তালিকাভূক্ত আসামী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা ইত্যাদি অভিযোগ করেন।
এদিকে সদ্য যোগদানকারী ওসি মোস্তাক আহম্মেদ সম্পর্কে জানা গেছে তিনি ২০০৩ সালের এস আই ক্যাডেট। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। আরএমপি তে যোগদানের পূর্বে তিনি মোহনপুর ও বাগমারা থানার ওসি ছিলেন।
বিআলো/তুরাগ