অবশেষে ৩২ ঘণ্টা পর তানোরে গর্তে পড়া শিশু উদ্ধার
বিআলো ডেস্ক: রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত নলকূপের জন্য খনন করা সরু গর্তে পড়ে আটকে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে টানা দেড় দিনের উদ্ধার অভিযানের পর অচেতন অবস্থায় তুলে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কঠিন পরিস্থিতি ও নরম মাটির কারণে দীর্ঘসময় ধরে উদ্ধারকাজ চালাতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে বুধবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে দুই বছরের শিশু সাজিদ। সরু ও গভীর একটি পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায় সে। গর্তটির ব্যাস মাত্র ছয় থেকে আট ইঞ্চি এবং গভীরতা ৩০–৩৫ ফুট হওয়ায় শিশু আটকে পড়ে নিচে।
ঘটনার পরপরই সংকট
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে শিশুকে শনাক্ত বা গর্তের নিচ পর্যন্ত পৌঁছানো কঠিন হওয়ায় পরে ইউনিট সংখ্যা বাড়িয়ে মোট আটটি করা হয়। পাশাপাশি উদ্ধার অভিযান তদারকিতে ৫০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় থানার কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে পরিস্থিতির আপডেট দেন। গর্তের মুখ সংকীর্ণ হওয়ায় এবং মাটি ঝুরঝুরে হওয়ায় গর্তের ভেতরে সরাসরি প্রবেশ করা সম্ভব ছিল না। প্রথম দিকে গর্তের ভেতরে সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা নামানো হয়, কিন্তু ৩৫ ফুট পর্যন্ত ক্যামেরা গেলেও শিশুটিকে শনাক্ত পাওয়া যায়নি।
শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা
শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখতে গর্তে ভেন্টিলেশন পাইপ বসানো হয় এবং কিছু সময় অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। বুধবার বিকেল পর্যন্ত শিশুর শব্দ শোনা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে আর কোনো সাড়া মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পাইপ চালু রাখলেও পরে সেটি সরিয়ে নিতে হয়।
উদ্ধার অভিযান
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গর্তের পাশে সমান্তরালভাবে নতুন একটি পথ তৈরি করে নিচের দিকে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে গর্তের চারপাশের নরম মাটি বারবার ধসে পড়ায় অপারেশন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। প্রথমে একটি ছোট এক্সকাভেটর ব্যবহার করা হলেও পরে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে বড় এক্সকাভেটর আনা হয়। রাতভর মাটি কাটার কাজ চলে।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৩৫ ফুট পর্যন্ত খননেও শিশুটির অবস্থান শনাক্ত না হওয়ায় আরও পাঁচ ফুট নিচ পর্যন্ত খনন করা হয়। পরে ৪০ ফুটের বেশি গভীরে গিয়ে ধ্বংসাবশেষ সরানোর পর শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
গর্তের উৎস ও নিষেধাজ্ঞা
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পাঁচন্দর ইউনিয়ন ভূগর্ভস্থ পানির টানাপোড়েনপূর্ণ এলাকা। এখানে গভীর নলকূপ বসানোর ওপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও ওই জমির মালিক প্রায় এক বছর আগে আট ফুট ব্যাসার্ধের একটি কূপ খনন করেছিলেন। পানি না মেলায় কাজ আর এগোয়নি এবং গর্তটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। বর্ষায় মাটি দেবে গিয়ে সেখানে আবার নতুন করে সংকীর্ণ গর্ত তৈরি হয়; এ গর্তেই পড়ে যায় সাজিদ।
অভিযানের সমাপ্তি
টানা প্রায় ৩২ ঘণ্টার পরিশ্রমের পর শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিত্যক্ত গর্ত বন্ধ বা নিরাপদে ভরাটে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/শিলি



