আজ ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস
এম এ হালিম: আজ ৭ নভেম্বর। ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সাধারণ জনতা এবং সেনাবাহিনীর এক ঐতিহাসিক বিপ্লব সংঘটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় মিড লেভেলের অফিসার কর্তৃক এক সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বিদেশে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পান।
মুজিব পরবর্তীকালে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন রূপে রাষ্ট্রপরিচালনা করতে শুরু করে। ১৫ আগস্টের অব্যবহিত পরেই ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর জেলখানায় আরেকটি হত্যাকাণ্ডে চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, আবুল হাসানাত মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) মোহাম্মদ মনসুর আলী নিহত হন। এর ঠিক এক দিন আগে অর্থাৎ ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিলের নেতৃত্বে আরেকটি সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। এ সময় বাংলাদেশের শংকিত জনমানুষ পুনরায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমনি এক বাস্তবতায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে সংঘটিত হয় সিপাহী জনতার বিপ্লব।
এদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিক, জুনিয়র অফিসাররা বন্দি সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার প্রদান করে এবং তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষার দায়িত্ব দেয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা, জেড ফোর্স-এর কমান্ডার এবং দুইটি সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এবং অসংখ্য সাম্মুখ সমরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও যোগ্য অফিসার হিসেবে সকলের মাঝে গ্রহণযোগ্য ছিলেন।
সেই ইমেজ কাজে লাগিয়ে জিয়াউর রহমান তার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। বাংলাদেশ সব ধরনের ষড়যন্ত্রমুক্ত হয়। এই বিপ্লবের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানকে দেখে দেশবাসী আশ্বস্ত হয় এবং জুনিয়র অফিসার ও সৈনিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে স্বাধীনতার আনন্দে। মুক্ত বাংলাদেশে তারা ট্যাংকের উপর চড়ে আনন্দ মিছিল করে। এভাবেই ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে সিপাহী জনতার এক বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকৃত স্বাধীনতার মর্যাদা ও অহংকার নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দিবসটি উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করবে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরস্থ প্রয়াত জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদসবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ ও সহযোহী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এছাড়া বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) গেট সংলগ্ন বহিরাংশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। উপস্থিত থাকবেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকনসহ বিএনপি ও জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দল দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথকভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবে।
বিআলো/তুরাগ