• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য: রফিকুল ইসলাম 

     dailybangla 
    02nd Jan 2025 7:53 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    একজন শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলার পেছনে বাবা-মায়ের চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। বিশ্ব সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। তারা জ্ঞানশূণ্য মানবশিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখান, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। আল্লাহ তা’য়ালা সুরা বাকারার ২৬৯ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন, তিনি যাকে চান, জ্ঞান দান করেন। আর যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে সে আসলে বিরাট সম্পদ লাভ করেছে। এই কথা থেকে কেবলমাত্র তারাই শিক্ষা লাভ করে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী।

    আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ ইবনে মাজাহ : ২২৫
    যেহেতু আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন, সেহেতু আমরা বলতে পারি, শিক্ষকতা নবুয়তি মহান পেশা। শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গঠনের কারিগর। একজন আর্দশ শিক্ষকই পারেন ছাত্রছাত্রীকে সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে। শিক্ষকদের অবস্থান সবার উপরে। শিক্ষকরাই ভবিষ্যতের জন্য আগামী প্রজন্মকে তৈরি করতে পারেন। শিক্ষকদের এই কৃতিত্বের জন্যই তাদের কে সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরা সম্মান করেন এবং শ্রদ্ধা করেন। যে জাতি বা দেশের শিক্ষার অবকাঠামো ও শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ যত উন্নত, দেশ ও জাতি হিসেবে সার্বিকভাবে তারাই উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।

    এই জাতি গঠনে মূল কাজটি করেন আমাদের শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা ঠিক কতটা তা আমরা খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি। একজন ছাত্র তখনই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবে যখন সে একজন ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা পাবে। শিক্ষকতা পেশা মহৎ পেশা হলেও অনেক সময় সমাজে এটাকে ছোট করে দেখা হয়। নানা রকম বৈষম্য, প্রতিকূলতার শিকার হওয়ার পরেও তারা অনবরত শিক্ষা বিতরণ করতে থাকেন সকলের মাঝে। অনেক রকম সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষকতা পেশা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে অতটা আকর্ষণীয় মনে হয় না। যেখানে অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণটা বেশি সেখানে এই মহৎ পেশার স্বল্পমূল্যের চাকরি অনেকেই করতে অনিচ্ছুক। অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, সেখানে শিক্ষকের মর্যাদার পাশাপাশি বেতনের পরিমাণও বেশি। বাংলাদেশে শিক্ষকদের অবস্থা যদি তুলে ধরা হয় তাহলে আমরা কিছু বাস্তবিক প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করি, যেখানে শিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণের কারিগরকে ঠিক কতটুকু সুযোগ-সুবিধা বা মর্যাদা দেওয়া হয়।

    শিক্ষক হলেন সাধারণ মানুষের আলোর বাতিঘর। দেশের সর্বোচ্চ স্তম্ভ। আগামী আদর্শ প্রজন্ম তৈরি করতে আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নাই। ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে শিক্ষকের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকতা শুধু পড়ানোর নাম নয়, চিন্তা, চেতনা, নৈতিকতা সংশোধনের নাম।

    ঘড়হব নঁঃ ঃযড়ংব যিড় যধাব ঃযব ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ভড়ৎনবধৎধহপব ধৎব ভরঃ ঃড় নব ঃবধপযবৎ.
    কৌতূহল জাগানো ও কৌতূহল নিবৃত্ত করা শিক্ষকের কাজ।
    আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেনÑ ‘আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব, যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ সহিহ বোখারি : ৪৬৩৯
    শিক্ষকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য : শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের প্রাণ। তাকে ঘিরেই পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া আবর্তিত হয়। তাই তার দায়িত্ব-কর্তব্যও অনেক। এসব দায়িত্বের কিছু ব্যক্তিগত, কিছু প্রতিষ্ঠান-প্রশাসন কেন্দ্রিক, কিছু শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক এবং কিছু সহকর্মী কেন্দ্রিক। এক আদর্শ শিক্ষকের মৌলিক কিছু সামান্য দায়িত্ব ও কর্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো:

    ব্যক্তিগত দায়িত্ব-কর্তব্য: 
    ১. পাঠপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন এবং তার আলোকে ক্লাস নিবেন।
    ২. শিক্ষক হবেন একজন পড়ুয়া। সকল ধরনের জ্ঞান অর্জনে তিনি সদা সচেষ্ট থাকবেন এবং ছাত্রদের নতুন নতুন তথ্য প্রদান করবেন।
    ৩. শিক্ষা সংক্রান্ত আধুনিক কলাকৌশল যেমন আই.সি.টি. ইত্যাদিতে পারদর্শিতা অর্জন করবেন এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণে দক্ষতা অর্জন করবেন।
    ৪. শিক্ষকতার মান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ নিবেন এবং গৃহীত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন।
    ৫. সকল শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার সনদপত্র যত্নসহকারে ফাইলে সংরক্ষণ করবেন।
    ৬. শিক্ষক সময়ের প্রতি যত্নবান হবেন। সঠিক সময় প্রতিষ্ঠানে হাজির হবেন এবং ছুটির পর প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ শেষ করে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করবেন।
    ৭. সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য হবে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

    প্রতিষ্ঠান-প্রশাসন কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
    ১. প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
    ২. অফিস থেকে তার কাছে কোনো কাগজপত্র পূরণ করে দিতে বললে তা যথাযথ পূরণ করে দিবেন।
    ৩. প্রারাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা মেনে চলবেন।
    ৪. চাকরির বিষয় নিজের প্রয়োজনিয়তা ও সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাবেন।
    ৫. প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। কোনো কারণে ভুলবোঝাবুঝি হ’লে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন।
    ৬. প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করবেন না এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন না।
    ৭. শিক্ষক হাজিরা খাতায় যথাসময়ে স্বাক্ষর করবেন এবং ডিজিটাল হাজিরা থাকলে তাতে টিপ দিবেন।
    ৮. প্রতিষ্ঠানের অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন এবং প্রতিষ্ঠানে এসে প্রধানের সঙ্গে দেখা করবেন এবং যাওয়ার সময় বলে যাবেন।

    শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
    ১. নির্ধারিত সময়ে শ্রেণিকক্ষে হাজির হবেন এবং নির্ধারিত সময়ে শ্রেণির পাঠ কার্যক্রম শেষ করবেন।
    ২. ছাত্রছাত্রীদের নাম হাজিরা করবেন এবং নিয়মিত হাজিরা নিবেন।
    ৩. ছাত্রছাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও পিতা-মাতার মোবাইল নাম্বার হাজিরা খাতায় লিখে নিবেন।
    ৪. শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেরণা সৃষ্টি করবেন।
    ৫. ক্লাস শেষে পাঠদানের বিষয় অফিস কপি ডায়েরিতে লিখে রাখবেন।
    ৬. ক্লাসে পড়াতে গিয়ে কোথায় পড়া তা ছাত্রছাত্রীদের কাছে জিজ্ঞেস করবেন।
    ৬. পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করবেন।
    ৫. বিএড-এমএড প্রশিক্ষণ থেকে লব্ধ জ্ঞান অনুযায়ী শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদান করবেন। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ গ্রহণে সবসময় সক্রিয় থাকে।
    ৬. শিখনফল অর্জিত হচ্ছে কি-না তা মূল্যায়ন করবেন।
    ৭. তার ক্লাস গ্রহণ যেন আনন্দঘন হয়, যান্ত্রিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
    ৮. পাঠ আয়ত্ব করার কৌশল শিখাবেন।
    ৯. শিক্ষার্থীদের কারো প্রতি বিদ্বেষ এবং কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন না।
    ১০. তাদের সুখ-দুঃখ, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাদি জানা ও সমাধানের চেষ্টা করবেন।
    ১১. ছাত্রছাত্রীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, দ্বীনী ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সচেতন করবেন।
    ১২. পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার কৌশল শিখাবেন।
    ১৩. শিক্ষার্থীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন না।
    ১৪. শিক্ষার্থীর অসদাচরণ কিংবা পড়া না পারার জন্য দৈহিক ও মানসিক শাস্তি দিবেন না। ভালোবেসে সংশোধনের চেষ্টা করবেন।
    ১৫. শিক্ষার্থীদের জ্ঞানস্পৃহা বাড়াতে তাকে প্রশ্ন করতে দিবেন এবং তিনি উত্তর দিতে চেষ্টা করবেন।
    ১৬. পঠন-পাঠনে তাদের যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করবেন।
    ১৭. ছোটদের স্নেহ, বড়দের সম্মান ও সমবয়সীদের সঙ্গে করণীয় আচরণ শিখাবেন।
    ১৮. শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন অনুকরণীয় আদর্শ মানুষ হবেন।
    ১৯. তাদের দ্বীন-ধর্ম পালন ও চরিত্র গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
    ২০. তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন।

    সহকর্মী কেন্দ্রিক দায়িত্ব-কর্তব্য :
    ১. সিনিয়রদের সম্মান, জুনিয়রদের স্নেহ এবং সমবয়সীদের ভালোবাসা জানাবেন।
    ২. তাদের সঙ্গে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করবেন।
    ৩. শিক্ষণ-শিখন বিষয়ে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জনে তাদের পরামর্শ নিবেন।
    ৪. প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখবেন।
    ৫. সকলের সুখে-দুখে সহমর্মিতা জানাবেন এবং যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন।
    ৬. প্রতিষ্ঠানের সকলে মিলে এক পরিবার হয়ে থাকবেন।
    আমরা যারা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত আছি তারা এসব দায়িত্ব যথাসাধ্য পালন করলে ইনশাআল্লাহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সমাজের মাঝে একজন গ্রহণযোগ্য ও প্রিয়ভাজন মানুষ হিসেবে পরিচিতি হতে পারব। তার দ্বারা শিক্ষার্থীবৃন্দ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশানুরূপ উপকৃত হবে।

    মো. রফিকুল ইসলাম

    শিক্ষক, তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ শাখা

    বিআলো /তুরাগ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930