আদানি পাওয়ারের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ: রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা, ০৩ মে, ২০২৪: ভারতের বৃহত্তম বহুজাতিক সংস্থা আদানি পোর্টফোলিওর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার লিমিটেড সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ এ শেষ হওয়া আদানি পাওয়ারের এক বছরের এই আর্থিক ফলাফলে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে।
কোম্পানির নিট মুনাফা ৪৭.৮ শতাংশ কমে হয়েছে দুই হাজার ৭৩৭ কোটি রুপি। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আদানি পাওয়ারের নিট মুনাফা ছিল পাঁচ হাজার ২৪২ কোটি রুপি। তবে আগের বছরের তুলনায় ১০ হাজার ২৪২.৬ কোটি রুপি থেকে রাজস্ব ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৩.৬৯ কোটি রুপি।
আদানি পাওয়ারের প্রকাশিত আর্থিক বিররণীতে দেখা যায়, চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানির মোট আয় ১৩ হাজার ৮৮১.৫২ কোটি রুপি, যেখানে গত অর্থ-বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭৯৫.৩২ কোটি রুপি। শেষ প্রান্তিকে কোম্পানির মোট মুনাফা (ইবিআইটিডিএ) ১২৬ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ২৭৩ কোটি রুপিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩২৯ কোটি রুপি। আমদানিকৃত জ্বালানির কম দাম, ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ হারে বিক্রি এবং গোড্ডা প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত মুনাফার কারণে আদানি পাওয়ারের মোট মুনাফা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থ-বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে আদানি পাওয়ার লিমিটেড (এপিএল) উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এটি মূলত সম্ভব হয়েছে ভারতের ঝাড়খণ্ডে ১৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (ইউএসসিটিপিপি) এর সফল কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে। এটি এই অর্থ-বছরের প্রথম প্রান্তিকে চালু করা হয়। এদিকে এই অর্জনে আরও অবদান রেখেছে মুন্দ্রার প্রায় সব প্ল্যান্ট, যার মধ্যে রয়েছে নতুন চালু হওয়া গোড্ডা প্ল্যান্ট, উড়ুপি ও মাহান। তাছাড়া, ভারতজুড়ে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার কারণে দেশটির অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত ছিল এবং আমদানিকৃত কয়লা ও বিকল্প জ্বালানির দাম কম হওয়ায় গ্রাহকদের জন্য এটি আরও সহজলভ্য হয়।
গোড্ডা প্রকল্প চালু হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের অবচয় চার্জ ও অর্থ ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে হয়েছে ৯৯০ কোটি রুপি এবং ৮২০ কোটি রুপি। তবে, ক্রেডিট রেটিং আপগ্রেডের পর সুদের হার হ্রাসের পাশাপাশি ঋণ গ্রহণ হ্রাসের কারণে আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণও সামলানো গেছে। পরিচালন মুনাফায় এই স্থায়ী উন্নতির ফলে কর পূর্ব মুনাফা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থ বছরের শেষে যা ছিল ৮৯৮ কোটি রুপি, চলতি অর্থ বছরের শেষে এসে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৫৮ কোটি রুপিতে।
আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ২০২৩-২৪ অর্থ-বছর শেষ হয়েছে একটি দারুণ ব্যালেন্স শীট ও তারল্যের সমন্বয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। ৩১শে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত, প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারহোল্ডারদের তহবিল বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রুপি, যেখানে মোট নিট ঋণ নেমে এসেছে ২৬ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকায়। গত অর্থ বছরের ৩১শে মার্চ এই অর্থের পরিমাণ ছিল ধারাবাহিকভাবে ২৯ হাজার ৮৭৬ কোটি রুপি এবং ৩৯ হাজার ৪৩৪ কোটি রুপি।
আর্থিক বিবরণীর বিষয়ে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বলেন, “ভারত একটি আরও টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে রূপান্তরিত হচ্ছে। আদানি পোর্টফোলিওর প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদ্ভাবনী ও নির্ভরযোগ্য সমাধান প্রদান করার পাশাপাশি কোটি কোটি নাগরিকদের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকবে। আদানি পাওয়ার হলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের একটি মূল উপাদান, যার মাধ্যমে দেশের একটি বিশাল অংশ জুড়ে নির্ভরযোগ্য বেস লোড পাওয়ার সরবরাহ, উল্লেখযোগ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন, দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ তৈরি এবং জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে বৃহৎ পরিসরে সহজতর একীভূতকরণের কাজ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড জুড়ে নিরবচ্ছিন্ন উদ্ভাবন চালিয়ে যেতে এবং আমাদের সকল অংশীদারদের টেকসই সুযোগ-সুবিধা প্রদানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও এস বি খেয়ালিয়া বলেন, “আদানি পাওয়ারের চলতি অর্থ বছরের শেষ প্রান্তিকের এই আর্থিক বিবরণী প্রতিষ্ঠানটির শক্তিশালী পারফরম্যান্সকে প্রদর্শন করে। এক বছরের ব্যতিক্রমী কার্যক্রম এবং আর্থিক পারফরম্যান্স কোম্পানির দৃঢ় কৌশল গ্রহণের একটি প্রমাণ। কোম্পানির লক্ষ্য অর্জনের এই যাত্রায়, আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রকল্প ব্যয় হ্রাস এবং প্রকল্পের সক্ষমতার উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছি। টেকসই, সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা দিতে এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আদানি পাওয়ার। একইসঙ্গে, সময়মতো ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে জ্বালানি সক্ষমতা তৈরি করে তা সরবরাহ করতেও অঙ্গীকারবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠান।”
বিআলো/তুরাগ