আদালতে ককটেল বিস্ফোরণ, পুতুলের জামিন স্থগিতই থাকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন মামলায় হাফসা আক্তার পুতুলের জামিন স্থগিতই থাকছে। সোমবার হাইকোর্টের দেওয়া জামিনে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ চলমান রেখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন পুতুল। সে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল ও কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের জামিন আদেশ বহাল চেয়েছিলাম। শুনানিতে আপিল বিভাগ জানতে চেয়েছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে কিনা।
জবাবে বলেছি, আছে কিন্তু সেখানে (অপরাধের সঙ্গে) তার (পুতুলের) সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু তার স্বামীর সম্পৃক্ততা আছে বলে জবানবন্দিতে আছে। এরপর আপিল বিভাগ সেই জবানবন্দি পড়ে বলেছেন, আপনারা হাইকোর্টে যান। এরপর আদালত চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে এবং আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাইকোর্টকে রুল শুনানি করতে বলেছেন।
গত ২০ নভেম্বর বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিনই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯০৮ এর ৩/৬ ধারায় রাজধানীর কতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হোসেন মামলা করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসাইস জনিকে। তদন্তে নেমে ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের অবস্থান সনাক্তের পর ২৬ নভেম্বর শ্যামপুর থানার গ্লাস ফ্যাক্টরির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাফসা আক্তার পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ককটেল হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ঘটনার দিন ব্যবহৃত একটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুতুলকে তিন দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুতুল বলেছেন, গত ২০ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তার দেবর আ. রহমানকে কোর্টে আনা হবে এমন তথ্য পেয়ে পুতুল তার স্বামী আব্দুল হামিদ ভূইয়া ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মোটারসাইকেলে করে বাসা থেকে রওয়ানা দেন। তারা প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাদের মোটরসাইকেলটি পার্ক করেন। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানকালে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের কাছে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগে একটি ককটেল রাখাতে দেয়। পরবর্তীতে তারা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের চতুর্থ তলায় উঠে।
এরপর আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ককটেলটি বের করে আদালত প্রাঙ্গণে ছুড়ে মারে। যার ফলে ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ঘটনার পর তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পুতুলের স্বামী হামিদ ওয়ারী থানা যুবদলের সদস্য। এ ঘটনার পর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ককটেল বিস্ফোরণের সিসিটিভি ফুটেজ প্রচার করে। ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হন। পরে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত ৬ মার্চ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাফসা আক্তার পুতুলকে তিন মাসের জামিন দেন।
নিজেকে ঘটনায় না জড়িয়ে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ককটেল বিস্ফোরণে জানমালের ক্ষতি না হওয়া, জামিন আবেদনকারী একজন নারী এবং তাঁর দুটি শিশু সন্তান রয়েছে, এসব বিষয় বিবেচনায় তাঁকে জামিন দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে কেন তাকে নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নে রুলও জারি করেন।
এরপর জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১০ মার্চ সে জামিন স্থগিত করে দেন চেম্বার আদালত। পরে এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন হাফসা আক্তার পুতুল।
বিআলো/শিলি