‘আমি সাইকেল চাই না, বাবার লাশটা শেষবারের মতো দেখতে চাই’
মো. হেমায়েত হোসেন খান, মাদারীপুর: আমি বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে সাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আমি আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে চাই। আপনারা আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দিন। কান্না করতে করতে সাংবাদিকদের কাছে এই কথাগুলো বলছিল মাদারীপুর সদর উপজলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াড়ভাঙ্গা গ্রামের নিহত সৌদি আরব প্রবাসী মিলন মাতুব্বরের ৯ বছরের ছেলে আবির মাতুব্বর।
বাবাকে এক নজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরো বলছে, আমি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমার বাবা সৌদি আরবে গত রবিবার মারা গেছে। এখন আমার মাদ্রাসার পড়ার খরচ কে চালাবে আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে দেশে এনে একবার দেখার ব্যবস্থা করে দিন। স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি আরবে যায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াড়ভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন মাতুব্বর (৩৫) চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মিলন মাতুব্বার ছিলেন মেজো। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের হালুজারায় থেকে কাজ করতেন। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনি মিলন। সৌদির আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোন রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ চালাতেন তিনি।
গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে বসবাসরত অবস্থায় ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। পরে একই সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৬ দিন পরে মারা যান তিনি। রবিবার দুপুরে সৌদি আরব থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মাঝে শুরু হয় শোকের মাতম। নিহত মিলনের স্ত্রী জানান, আমাদের দেখার মতো এখন আর কেউ রইলো না। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করবো। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করবো।
বিআলো/তুরাগ