আমৃত্যু নিকলী-বাজিতপুরের জনগণের পাশে থাকব: একান্ত সাক্ষাৎকারে হাজী মো. মাসুক মিয়া
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় অবস্থানে। সকল রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন মাঠে। চলছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ঝাঁপ। বিএনপি ইতোমধ্যেই ৬৩ আসন বাদ রেখে দেশের ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সূচনালগ্নে দৈনিক বাংলাদেশের আলো সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ প্রথম পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতা হাজী মোহাম্মদ মাসুক মিয়া।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আকাশ মাহমুদ
বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী হাজী মোহাম্মদ মাসুক মিয়া ১৯৬৮ সালে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দারিশ্বর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম হাফেজ মো. আশরাফ উদ্দিন ছিলেন এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব। দাদা সৈয়দ মফিজ উদ্দিন ছিলেন একজন শিক্ষা ব্যক্তিত্ব ও ধর্ম প্রচারক। পারিবারিক ঐতিহ্য হাজী মোহাম্মদ মাসুক মিয়াকে একজন ধার্মিক ও মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছে। পেশাজীবনে তিনি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইর অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটওয়ার অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ রাবার এন্ড প্লাস্টিক-সু মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক, নিকলী উপজেলা বিএনপির ১নং সিনিয়র সহ-সভাপতি, ঢাকা কেরানীগঞ্জ ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি, নিকলী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বনির্ভর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পদে সফল ও প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করেন।
সাক্ষাৎকারপূর্ব একান্ত আলাপচারিতায় হাজী মোহাম্মদ মাসুক মিয়া বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন দক্ষ ও যোগ্য নেতা। আমি আশা করি, তার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ এবং জাতি। নিকলী-বাজিতপুরের জনগণও চায় মাটি এবং মানুষের নেতাই হোক এই আসনের সংসদ সদস্য। যোগ্যপ্রার্থী মনোনয়নের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, এ আসনটিতে জোটের কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপির মধ্য থেকে ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনা ও মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিলে মাথা পেতে নিব। এটি করা গেলেই আসনটিতে বিজয় নিশ্চিত হবে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে আসনটি উপহার দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের আলো: আপনার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকগুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
হাজী মোহাম্মদ মাসুক মিয়া: তারুণ্যের শুরুতে আমি যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী আদর্শ বুঝতে পারি তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতি ঝুঁকে পড়ি। একপর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও নিকলী-বাজিতপুরের অবিসংবাদিত নেতা ও সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জু ভাইয়ের হাত ধরেই আমার সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে। জীবিকার তাগিদে আমি ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও নিকলী-বাজিতপুরের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য সব সময় চিন্তাভাবনা করেছি। সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। মানুষকে ভালোবাসলে তাদের ভালোবাসা পাওয়া যায়, আমি এনটিই দেখেছি। নিকলী-বাজিতপুরের সর্বস্তরের জনসাধারণ আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, তাদের সুখ-দুঃখের কথা আমার সঙ্গে শেয়ার করে। বলতে পারেন আমাকে ভরসাও করে। মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি, এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ভালোবাসাই আমার রাজনৈতিক শক্তি। আমার কোন লবিং নেই, প্রচার-প্রচারেও আমি নেই। আমি জনগণের মধ্যে আছি, জনগণের পাশেই আমৃত্যু থাকতে চাই। এটিই আমার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশের আলো: বিএনপির রাজনীতিতে আপনার সম্পৃক্ততা ও সাংগঠনিক জীবন সম্পর্কে কিছু জানাবেন কি?
হাজী মাসুক: আপনারা দেখেছেন, আমি ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আপ্যায়ন উপ-কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের উদ্যোগে জাতীয় কৃষক সম্মেলন ২০২৫ সফল করার লক্ষ্যে সেমিনার, পুরস্কার ও কারিগরি উপকমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে আমি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। একই সঙ্গে নিকলী উপজেলা বিএনপির ১নং সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে ঢাকা কেরানীগঞ্জ ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি, নিকলী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বনির্ভর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আপনারা এটিও জানেন, দেশের উন্নয়ন ও জনস্বার্থে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বহুবার সভা-সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি।
আমার দুই যুগের বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি বিগত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের করুণ ইতিহাসও রয়েছে। ২০১৪ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় ভয়ে যখন বিএনপির অনেক সুবিধাবাদী চরিত্রের নেতা পদ-পদবি পর্যন্ত নিতে অনীহা দেখিয়েছেন এমন কঠিন সময়ে আমি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকার রাজপথ ও কিশোরগঞ্জের নিকলী-বাজিতপুরে মিছিল-মিটিং ও মানববন্ধনের মাধ্যমে জনমত তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। আমার এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আমাকে গ্রেপ্তার করে এবং আমার বিরুদ্ধে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অর্থায়নের অভিযোগ এনে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে। ঐ অমানসিক ও নিষ্ঠুর অত্যাচার-নির্যাতনে আমার পাঁজর ভেঙে যায়। মুক্তি পেয়ে একে একে চারটি অপারেশনের পরও আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কারণে আমার বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলা এখনো চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশের আলো: নিকলী-বাজিতপুরে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ডে আপনার ভূমিকা নিয়ে কিছু বলবেন কি?
হাজী মাসুক: আমি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী-বাজিতপুরের সন্তান। নিকলী সদর ইউনিয়নের নতুন বাজারে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নির্মাণসহ জারইতলা ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দলীয় কার্যালয় সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং নিকলী-বাজিতপুরে বিএনপির প্রায় সকল কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচিতে আমার নেতৃত্ব ও সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। আওয়ামী আমলের বিগত ১৭ বছরের দুঃশাসনে আমি জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েও জনগণের সঙ্গেই ছিলাম এবং এখনো জনগণের সঙ্গেই আছি, আগামীতেও থাকব, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের আলো: কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এই তালিকায় আপনার নামও আলোচিত হচ্ছে। আপনার অনুভূতি ও মন্তব্য জানাবেন কি?
হাজী মাসুক: ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে সারাদেশে প্রতিটি দলেই মনোনয়ন যুদ্ধ চলছে। আমাদের দল বিএনপিতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ত্যাগী নেতারা ফ্যাসিস্টের ১৭ বছর মাঠে ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে। আবার সুবিধাভোগীরাও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, মনোনয়নের চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, তৃণমূল জনগণ যাদেরকে চায় দলের মনোনয়ন তাদেরই পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ত্যাগী নেতারাই মনোনয়ন পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নিকলী-বাজিতপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতি দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর অসংখ্য নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণ আমাকে নিয়ে আগ্রহী, আমি এটি জানি। আমার সঙ্গে মাটি ও মানুষের সম্পর্ক আছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেও আমার নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ আছে। ইনশাআল্লাহ, বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড যদি দলের জন্য আমার ত্যাগ-তিতিক্ষা মূল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্য বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনগণের সমর্থন ও ভোটে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।
বাংলাদেশের আলো: আপনার জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু জানাবেন কী?
হাজী মাসুক: পারিবারিক ঐতিহ্য ও শিক্ষা থেকেই আমি বিভিন্ন উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছি। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমার সামাজিক কর্মকাণ্ডের পরিধিও দিন দিন বাড়তে থাকে। আমি প্রতি বছর মুসলমানদের পবিত্র ঈদ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজায় নিকলী ও বাজিতপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি এবং নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে আসছি। শীত মৌসুমে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে নিকলীর রসুলপুর গ্রামে একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক পাকা মসজিদ নির্মাণ করেছি। তাছাড়া বাজিতপুর নবাব কাচারি জামে মসজিদ নির্মাণে আর্থিক অনুদানসহ নিকলী ও বাজিতপুরের প্রায় সকল মসজিদ-মাদ্রাসা ও স্কুলে সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করেছি। অসচ্ছল পিতা-মাতার বিবাহযোগ্য কন্যাদের বিবাহ দানে আর্থিক সহায়তা প্রদান, নিকলী ও বাজিতপুরের বিভিন্ন এলাকায় হতদরিদ্র প্রসূতিদের ডেলিভারিতে অর্থ সহায়তা প্রদান, দরিদ্রদের চোখের ছানি অপারেশনে অর্থ সহায়তা প্রদান, নিকলী সদর ও গুরই ইউনিয়নে নদীর তীরবর্তী স্থানে মা-বোনদের পর্দা রক্ষার উদ্দেশ্যে নদীর তীরে গোসলখানা নির্মাণ, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কুলের বেতন ও বইপত্র পেতে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ নিকলী সরকারি হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ নিরসনে বিদ্যুৎ লাইন মেরামত ও ফ্যান প্রদান করেছি। তাছাড়া আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কারাবরণ করা অসংখ্য নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জেল থেকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করা দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ সহায়তা প্রদান করে নৈতিক দায়িত্বও পালন করেছি। রসুলপুর হানিফ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও পর পর দুই মেয়াদে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শিক্ষা খাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পেরেছি। দেশের বিগত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যায় আমার জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলী-বাজিতপুর ও সিলেটসহ বৃহত্তর হাওর অঞ্চলে সুপেয় পানি, খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ এবং বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার এ সকল উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক এবং মানবিক কর্মকাণ্ড আমাকে নিকলী ও বাজিতপুরের জনসাধারণের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। এ জন্য আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
বাংলাদেশের আলো: আপনি কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে উন্নয়ন ও জনকল্যাণে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিবেন?
হাজী মাসুক: নিকলী ও বাজিতপুরের জনগণ যদি আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন তবে প্রথমেই আমি এলাকার সব শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করব। আমার দল বিএনপির সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে প্রথমে জনপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিব। আপনারা ভালোভাবেই জানেন, ভাটি বাংলার প্রবেশদ্বার হিসেবে নিকলী ও বাজিতপুর সর্বাধিক পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা মৎস্য শিকার ও কৃষি এবং কৃষি নির্ভর পণ্য উৎপাদন। আমাদের পূর্বপুরুষরা জীবন-জীবিকার যে সংগ্রাম করেছেন তা আজ ইতিহাসের অংশ এবং এক করুণ অধ্যায়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি সমৃদ্ধশালী ও নিরাপদ আবাসভূমি পাবে এটি আমার অন্যতম স্বপ্ন। আমি নিকলী-বাজিতপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং জেলে জীবনকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে দিতে চাই।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমি নিকলী-বাজিতপুরের হাওর অঞ্চলে উন্নত একটি পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি। আল্লাহর রহমতে আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি, তবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নিকলী-বাজিতপুরের কৃষি খাতে পরিবর্তনের এক নতুন ধারা সৃষ্টি করব, ইনশাআল্লাহ। আমার এলাকার জেলে সম্প্রদায় এবং কৃষক ভাই-বোনরা ভালো থাকলে নিকলী ও বাজিতপুরের পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে। নিকলী-বাজিতপুরের হাওর অধ্যুষিত উন্মুক্ত জলাভূমি ও জেলে সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরেই ইজারাদার ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আমি স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এইসব মাদক-সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করব। প্রয়োজনে প্রশাসন এবং জনতার যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলব। এসব অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধে আমি প্রশাসন এবং জনগণের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চলের কৃষি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এই কঠিন সময়টিতে আমার সাধ্যমতো নিকলী ও বাজিতপুরের যুবকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্প গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের আলো: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়ন নিয়ে আপনার মন্তব্য ও পরামর্শ আছে কি?
হাজী মাসুক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সকল দলই জনগণের চাওয়া ও প্রত্যাশার বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন বলে আশা করি। আপনারাও জানেন যোগ্যপ্রার্থী মনোনয়নই বিজয় নিশ্চিত করতে পারে। বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের জেলজুলুম, নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ। আমি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েও বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় সকল কর্মসূচিতে সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। সারাদেশের মতো এ ধরনের ঘটনাগুলো বিবেচনায় এনে দল যদি নিকলী-বাজিতপুরের ত্যাগী নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন দেয়, তাহলে অবশ্যই আমার বিষয়টি অগ্রাধিকার ও সুবিবেচনায় আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করে এবং কোনরকম জেল-জুলুম, মামলা-মোকদ্দমার শিকার না হয়ে এখন যারা মাদক-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারা এবার বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাবেন না”। গণমাধ্যমের ভাইয়েরা আমার সংসদীয় আসন নিকলী-বাজিতপুরে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে পারেন, কারা এই সকল অন্যায়-অপকর্মে জড়িত। মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ও চাঁদাবাজি এবং ভূমিদস্যুতার ঘটনাগুলো সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের হাইকমান্ডের কাছে আমার আকুল আবেদন-বিতর্কহীন, ত্যাগী, যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করে যেন এবারের কঠিন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের আলো: ইতোমধ্যেই বিএনপি ৬৩ আসন বাদ রেখে ২৩৭ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমর্থক ও মাঠকর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও অবরোধ এবং ভাঙচুর করেছে। বেশ কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আদর্শের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
হাজী মাসুক: দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সকল দলই জনগণের চাওয়া ও প্রত্যাশার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় আনেন। বিএনপি এর ব্যতিক্রম নয়। বেশকিছু আসনে যোগ্যপ্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ এনেছে স্থানীয় জনসাধারণ। কোথাও কোথাও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ এমনকি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনাগুলো সমস্ত গণমাধ্যমেই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের টানা ১৭ বছরের দুঃশাসনে সারাদেশে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা জেল জুলুমসহ নানামুখী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েও আমি বিএনপির প্রায় সকল কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলাম, এখনো আছি। নিকলী ও বাজিতপুরে আমার অবস্থান স্পষ্ট। ১৭ বছরের দুঃসময়ে আমি জনগণের পাশেই ছিলাম এবং এখনো আছি। এই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী দেয়নি। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনা করলে আমি এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাব এ বিশ্বাস আমার আছে।
আপনারাও জানেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাফকথা “আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৭ বছরে যে সকল বিএনপির নেতা জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার না হয়ে ফ্যাসিবাদীদের দোসর হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সুবিধা ভোগ করেছে, যারা ভূমিদস্যুতা, মাদক কারবার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না”। নিকলী-বাজিতপুরের জনগণ তাদের কখনোই মেনে নেবে না।
বিআলো/ইমরান



