• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    আয়না ঘরের গুমসংক্রান্ত বর্ণনা দিলেন বিএনপি নেতা মাজেদ 

     dailybangla 
    13th Feb 2025 7:44 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    বিশেষ প্রতিবেদক: মানুষের মুখে মুখে ফেরা আয়নাঘরখ্যাত গোপন বন্দিশালার অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। পতিত শেখ হাসিনার শাসনামলে এসব বন্দিশালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রেখে ভয়ংকর নির্যাতন করা হতো।

    ইতোমধ্যেই আলোচিত নির্যাতন কেন্দ্র আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে জমা পড়ছে একের পর এক অভিযোগ। যেখানে রক্ত হিম করা একের পর এক নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তাদেরই একজন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও উত্তর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। একই সঙ্গে তিনি দেশের অ্যাভিয়েশন খাতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আর্থিক সহায়তার অভিযোগে তাকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে জমটুপি পরিয়ে এই আয়নাঘরেই নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। টানা ৬ দিন বন্দি ছিলেন ওই গোপন বন্দিশালায়। পুরো সময় তার চোখে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে চালানো হয় ভয়াবহ নির্যাতন। পানি চাইলে প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রস্রাব খাওয়ার। অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিন কেটেছে তাঁর মৃত্যুর প্রহর গুনে। একপর্যায়ে তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হলেও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট তিনি মুক্তি পান।

    সম্প্রতি গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে দুই পাতার একটি অভিযোগে এমনটিই উল্লেখ করেছেন তিনি। আর তাতেই উঠে এসেছে তাকে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র। ফ্যাসিস্ট সরকারের গুমের শিকার হলেও এখন তাকে নিয়ে উল্টো নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন অ্যাভিয়েশন খাতের একটি চক্র। মূলত চক্রটি নিজেদের পতিত সরকারের সময়কার অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট আড়াল করতেই বিভিন্নভাবে তাকে হেনস্থার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন লুৎফুল্লাহেল মাজেদ।

    জানা যায়, বিএনপি নেতা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এরই জেরে সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল গত বছরের ৩০ জুলাই তাঁকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে আয়নাঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। গুরুতর অসুস্থ হলেও তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি।

    গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে দেওয়া অভিযোগে বিএনপি নেতা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু উল্লেখ করেন, টানা ৬ দিন ধরে তার (মাজেদ) চোখ বেঁধে উল্টো করে টানিয়ে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। পানি চাইলে তাকে প্রস্রাব পর্যন্ত খাওয়ার কথা বলা হয়। জানতে চাওয়া হয়, তিনি আন্দোলনে কত টাকা খরচ করেছেন। লন্ডন থেকে তারেক রহমান কত টাকা পাঠিয়েছেন। এসব প্রশ্নের জবাব না দেওয়ায় তাকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করার জন্য ওপরের নির্দেশনা রয়েছে বলে হুমকি দেওয়া হয়।’

    একই অভিযোগে তিনি আরও বলেছেন, ‘আয়নাঘরে চোখ বেঁধে নির্যাতনকারীরা আমার কাছে জানতে চায়, প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক) ঘনিষ্ঠজনদের প্রজেক্ট নিয়ে রিট করেছিস কেন? আমি তখনই বুঝতে পারি সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান আমাকে আয়নাঘরে কেন বন্দি রেখেছেন? নির্যাতনের একপর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং আমার কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে আমাকে ৩ আগস্ট আয়নাঘরে চোখ খোলা হয়। পরের দিন মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। হাসিনার পতনের পর আমি ৬ আগস্ট মুক্তি পাই।’

    লুৎফুল্লাহেল মাজেদ তাকে গুলশানের বাসা থেকে সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের তুলে নেওয়ার আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার আগে বাসায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। আমার দু’শিশু সন্তান এতে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এখনও এই ঘটনায় তাঁরা ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।’ গুম ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে বাসার নিচে গাড়িতে তোলার আগে জমটুপি পরিয়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ওই রাতে তাকে একটি ভবনে নেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মাধ্যমে কত টাকা দিয়েছে, তাদের পরিকল্পনা কী এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের মিটিং হয় কোথায়?’

    ওই সময় সাদা পোশাকের অস্ত্রধারীরা তাকে বলেন, তোর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে কাকে কত টাকা দিয়েছিস, সব পেয়েছি আমরা।’ কিন্তু মাজেদ কোন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় তাঁর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। চোখ বাঁধা অবস্থায় একজন জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন) শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে তার ঝামেলা কী নিয়ে? অজ্ঞাতপরিচয় ওই লোকজনের কথাবার্তায় মনে হয়েছে, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আন্দোলন দমাতে তাকে গুম করা হয়েছে।

    এর আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপি নেতা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ গুলশানের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে দলের নেতা-কর্মীরা তার খোঁজ নিতে শুরু করেন। তাঁদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি গত ১০ আগস্ট ঢাকা থেকে ঈশ্বরগঞ্জে যান। ঈশ্বরগঞ্জে ফিরে শহরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোড়ে এক পথসভাতেও আয়ানঘরে নির্মম নির্যাতনের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন এই রাজনীতিক।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2025
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930