আলোড়ন সৃষ্টিকারী ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা কে এই লিয়াং?
বিআলো ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের নতুন উদ্ভাবন ডিপসিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি জগতে আলোড়ন তুলেছে। চীনা এই প্রযুক্তিটি কম খরচের এবং উচ্চ দক্ষতার এআই অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাপ শুধু চ্যাটজিপিটির মতো কার্যকরই নয়, বরং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়বহুল মডেলগুলোকে প্রতিযোগিতার নতুন মঞ্চে নিয়ে এসেছে। মাত্র ৬০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিপসিকের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যাপ স্টোরের শীর্ষ ডাউনলোড করা অ্যাপের তালিকায় ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে এটি। ব্যবহারকারীদের মতে, ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্টেন্ট শক্তিশালী ও ব্যক্তিগত ব্যবহারে দক্ষ।
বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই প্রযুক্তিটির উদ্ভাবন করেছেন ৩৯ বছর বয়সি চীনা প্রযুক্তিবিদ লিয়াং ওয়েনফেং।
ডিপসিক উদ্ভাবনের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চীনের প্রযুক্তি শিল্পের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা আরোপিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ক্রমবর্ধমান চক্র ভেদ করার আশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন এই প্রযুক্তিবিদ। লিয়াং ওয়েনফেং একজন চীনা উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী যিনি কোয়ান্টিটেটিভ হেজ ফান্ড হাই-ফ্লায়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সেইসঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও।
লিয়াং ওয়েনফেং ১৯৮৫ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশের ঝাংজিয়াং-এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, যেখান থেকে ২০০৭ সালে ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক এবং ২০১০ সালে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৮ সালে, লিয়াং ওয়েনফেং তার সহপাঠীদের সঙ্গে একটি দল গঠন করেন আর্থিক বাজার সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহের জন্য। তিনি মেশিন লার্নিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোয়ান্টিটেটিভ ট্রেডিং অনুসন্ধানের জন্য দলটির নেতৃত্বও দেন। এটি ২০০৭-২০০৮ সালের চীনের আর্থিক সংকটের সময় ছিল। স্নাতক হওয়ার পর, লিয়াং সিচুয়ানের চেংদুতে একটি সস্তা ফ্ল্যাটে চলে যান, যেখানে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই প্রয়োগের উপায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
এই উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়, যতক্ষণ না তিনি আর্থিক ক্ষেত্রে এআই প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। ২০১৩ সালে, লিয়াং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কোয়ান্টিটেটিভ ট্রেডিংয়ের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করেন এবং ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জু জিনের সঙ্গে হ্যাংঝো একেবি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোং লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন।
ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে, লিয়াং এবং তার অন্য দুই ইঞ্জিনিয়ারিং সহপাঠী নিংবো হাই-ফ্লায়ার কোয়ান্টিটেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট পার্টনারশিপের প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি বিনিয়োগের জন্য গণিত এবং এআই-এর ওপর নির্ভর করত। ২০১৯ সালে, লিয়াং হাই-ফ্লায়ার এআই প্রতিষ্ঠা করেন যা এআই অ্যালগরিদম এবং এর মৌলিক প্রয়োগ নিয়ে গবেষণার জন্য নিবেদিত ছিল। এই সময়ের মধ্যে হাই-ফ্লায়ারের অধীনে ১০ বিলিয়নেরও বেশি ইউয়ান সম্পদ ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে, লিয়াং ঘোষণা করেন যে, হাই-ফ্লায়ার কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে কাজ করবে এবং ডিপসিক চালু করবে।
চীনা গণমাধ্যম ৩৬শৎ-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে লিয়াং বলেছিলেন, মার্কিন সরকার চীনের ওপর এআই চিপ নিষেধাজ্ঞারোপ করার আগে হাই- ফ্লায়ার ১০,০০০ ঘারফরধ অ১০০ এচট কিনেছিল। এটি ডিপসিককে এলএলএম ডেভেলপার হিসাবে কাজ করার ভিত্তি তৈরি করে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ডিপসিক হাই-ফ্লায়ার থেকে তহবিল পায়। ২০২৪ সালে জুলাইয়ে, লিয়াং আবার ৩৬কৎ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, যখন ডিপসিক-ভি২ প্রকাশিত হয় এবং চীনে এআই মূল্য যুদ্ধ শুরু হয়, তখন এটি একটি বিশাল বিস্ময় হিসাবে আসে কারণ দলটি আশা করেনি যে মূল্য নির্ধারণ এত সংবেদনশীল হবে।
এরপর ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি, ডিপসিক-আর১ প্রকাশ করে, একটি ৬৭১-বিলিয়ন-প্যারামিটার ওপেন-সোর্স রিজনিং এআই মডেল ছিল। এর আর্কিটেকচার এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে একটি বিস্তারিত প্রযুক্তিগত গবেষণাপত্র প্রকাশের সঙ্গে। মডেলটি মাত্র ২,০৪৮ ঘারফরধ ঐ৮০০ এচট ব্যবহার করে ৫.৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল, যা পশ্চিমা প্রতিযোগীদের বিলিয়ন ডলার বাজেটের তুলনায় একটি সম্পদ- সাশ্রয়ী পদ্ধতির প্রদর্শন করে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যে, ডিপসিক চ্যাটজিপিটিকে ছাড়িয়ে যায় এবং মার্কিন রঙঝ অ্যাপ স্টোরে ১ নম্বর বিনামূল্যের অ্যাপ হয়ে ওঠে। লিয়াং ওয়েনফেং ওপেন সোর্স এআই-এর শক্তির একজন দৃঢ় বিশ্বাসী।
তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ওপেন সোর্স এআই এই ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করার সর্বোত্তম উপায়। তিনি আরও বিশ্বাস করেন যে ওপেন সোর্স এআই নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য যে এআই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা মানবতার সকলের জন্য উপকারী।
লিয়াং ওয়েনফেং বিবাহিত এবং তার একটি সন্তান রয়েছে। তবে লিয়াং সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি গণমাধ্যমে খুব একটা সাক্ষাৎকার দেন না। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি তেমন একটা কথা বলেন না।
বিআলো/শিলি