আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি রাতের আঁধারে বিক্রি!
সাজ্জাদুল ইসলাম, সোনাইমুড়ী: রাতের আঁধারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেতর থেকে বের হচ্ছে মাটি ভর্তি পিকআপ। চলে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশের গ্রামে। আশ্রয়ণ এলাকায় গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলছে এসব মাটি বহনকারী গাড়ির আনাগোনা। সরকারি জমির মাটি বিক্রির ঘটনা জানাজানি হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে সোনাইমুড়ী উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার কেগনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেতরে থাকা একটি পুকুর থেকে এসব মাটি কেটে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
জানা যায়, আশ্রয়ণ এলাকায় একটি পুকুর ও কিছু খালি জমি রয়েছে যেখানে সরকারিভাবে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণের কাজ চলছে। আর সেই কাজের জন্যই সরকারি ভাবে মাটি কাটা হয়েছে আশ্রয়ণে থাকা একটি পুকুর থেকে। তবে সেই মাটি রাতের আধারে বাইরে বিক্রি করছে একটি চক্র। চক্রের সদস্যরা আশ্রয়ণের ঘরেই থাকেন আর যুক্ত রয়েছেন সরকারিভাবে কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণের কাজে।
গত সোমবার (১২ মে) আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগে মাইজদীর ইউরো শপিং কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সেই সংবাদ প্রচার হয়েছে তবে সরকারি মাটি বিক্রি চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রশাসন।
বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ দিন পূর্বে আশ্রয়ণের ভেতরে সরকারিভাবে কবরস্থান নির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ চলছে আশ্রয়ণের পুকুর থেকে। মাটি কাটার কাজ করছেন আশ্রয়ণের ২২৬ নাম্বার ঘরের হাসেম, ৯২ নাম্বার ঘরের মতিন ও তার সহকারী বাচ্চু। সেই মাটি রাতের আধাঁরে গাড়িতে করে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে হাসেম ও মতিনরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাটি ভরাটের জন্য পিআইও অফিসের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সাথে এক হাজার ফুট মাটি আট হাজার টাকা চুক্তি হয় আশ্রয়ণের বাসিন্দা মতিনের সাথে। গত ১৫-২০ দিন পূর্বে ভেকু মেশিনের সাহায্যে আশ্রয়ণের পুকুর থেকে মাটি কাটা হয়। কবরস্থানের মাটি ভরাটের পাশাপাশি সেই মাটি রাতের আঁধারে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। ছোট কেগনা আমজাদ ব্যাপারি বাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণের পাঁচ গাড়ি মাটি বিক্রি করেছেন মতিন ও হাসেম। এছাড়া কেগনা ভূইয়া বাড়ি, কেগনা মন্দার বাড়ি সহ আশ্রয়ণের অনেক বাসিন্দাদের কাছেও মাটি বিক্রি করেছেন মতিন গং।
আশ্রয়ণের ২০৯ নাম্বার ঘরের বাসিন্দা দা বৃদ্ধা তাহেরা বেগম জানান, কয়েকদিন পূর্বে ১২০০ টাকার বিনিময়ে মতিনের কাছ থেকে এক গাড়ি মাটি কিনেছেন তিনি। মতিন আর কোথায় কোথায় আশ্রয়ণের মাটি বিক্রি করেছেন তিনি জানেন না। তবে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণের মাটি বিক্রির ঘটনা জানাজানি হওয়ায় মতিন তাকে একহাজার টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে বলে জানান তাহেরা বেগম।
সরেজমিনে গিয়ে আমজাদ ব্যাপারি বাড়ী এলাকায় মাটির স্তুপ দেখা যায়। সেখানে স্থানীয়রা জানান, সুমন নামের এক ব্যক্তি এই মাটি আশ্রয়ণের বাসিন্দা মতিন ও বাচ্চুর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ১০ গাড়ি মাটির চুক্তি করে। পরে পাঁচ গাড়ি ফেলে বাকি মাটি না দেওয়ায় সুমনের সাথে বাচ্চুর কথা-কাটাকাটি হয়। বাচ্চুর কাছ থেকে মাটি কেনার বিষয়টি স্বীকার করেন সুমন। তিনি বলেন, বাচ্চু তার সম্পর্কে জেঠাতো ভাই। বাচ্চুর সাথে ১৫ হাজার টাকায় ১০ ট্রাক মাটি দেওয়ার কন্ট্রাক হয়। কয়েকদিন পূর্বে চার ট্রাক মাটি দিয়েছে। বাকি মাটি না দেওয়ায় বাচ্চুর সাথে কয়েক দফা কথা কাটাকাটি হয়েছে। মাটি বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেন আশ্রয়ণের ২২৬ নাম্বার ঘরের হাসেম। তিনি বলেন, উপজেলা থেকে আশ্রয়ণের কবরস্থানের জন্য মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মতিনের কাছে। মাটি বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
মাটির বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে ৯২ নাম্বার ঘরের মতিন জানান, তিনি আশ্রয়ণের কবরস্থানে মাটি ভরাটের কাজ করছেন। তবে বাইরে কোথাও মাটি বিক্রি করেননি। রাতে তার সহযোগী হাসেম ও বাচ্চু কাজ করে। তারা রাতে মাটি বিক্রি করেছে কি না তিনি বলতে পারেন না।
এবিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি বাইরে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বিআলো/তুরাগ