ইরানে-ইসরায়েলের ‘নজিরবিহীন’ হামলা: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা মোড় নিচ্ছে নতুন দিকে
পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডার নিহত, পাল্টা হামলায় ইসরায়েলেও নিহতের খবর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি আরও একধাপ জটিল হয়ে উঠেছে। ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলের ‘নজিরবিহীন’ বিমান হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের চারটি স্থানে, বিশেষ করে খোররামাবাদ ও কেরামানশাহ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, “ইরানে যেসব স্থাপনা ইসরায়েলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে, সেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সব ধরনের হুমকি নির্মূল করা।”
“গত বছর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বিনিময়ের ঘটনা ঘটলেও এবারের সংঘর্ষ ছিল আরও বিস্তৃত এবং আগ্রাসী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের সাম্প্রতিক পাল্টা জবাব অতীতের যেকোনো সংঘাতের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত ও কৌশলগতভাবে বিস্তৃত ছিল।”
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইরানের ভূখণ্ডে এত বড় পরিসরে সামরিক হামলা চালানো হলো। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই হামলা ‘নজিরবিহীন’ এবং বহুমাত্রিক।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী অপারেশন “রাইজিং লায়ন” নামের অভিযানে ইরানের বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল শুধুমাত্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট স্থাপনাই নয়, বরং দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইটগুলোও।
ফলে ইরানের পাল্টা প্রতিরোধ বা জবাব দেওয়ার সক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ইরানের সামরিক কমান্ড এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তিদের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেটওয়ার্ক।
ইসরায়েলের তরফে চালানো এই অভিযানে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান, মূলধারার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং আইআরজিসি-র বিমান বাহিনীর প্রধানের মৃত্যু হয়েছে। আইআরজিসি ১৯৭৯ সালে শাহের শাসনকে উৎখাতকারী ইসলামি বিপ্লবের মূলে ছিল।
ইরান জানিয়েছে, কমপক্ষে সে দেশের ছয়জন বিজ্ঞানীরও মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা সফলভাবে ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের একেবারে কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করে আঘাত হেনেছে এবং প্রমাণ করে দিয়েছে যে সেখানে কেউই আর নিরাপদ নয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সংবাদে ৭৮ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। (এই সংখ্যা অনানুষ্ঠানিক। স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করা হয়নি।)
মোসাদ ইরানের ভিতর থেকেই ড্রোন হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানা গেছে। এই পুরো অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক স্থাপনা এবং আইআরজিসি-র ঘাঁটি। দীর্ঘ সময় ধরেই ইসরায়েল ঠিক এই কাজটাই করতে চেয়েছিল।
এই হামলা ইরানকে নাড়িয়ে দিয়েছে। হতে পারে এটা সূচনা মাত্র। হতে পারে ইসরায়েলের তালিকায় সম্ভাব্য আরও লক্ষ্যবস্তু রয়েছে যেখানে আঘাত হেনে ইরানকে আরও প্রভাবিত করতে চায় তারা।
এর মধ্যে কিছু লক্ষ্যবস্তু ইসরায়েলের নাগালের বাইরেও থাকতে পারে। হতে পারে সেই সমস্ত লক্ষ্যবস্তু শক্ত পাথরের নীচে শক্তিশালী ঘাঁটিতে গভীর ভূগর্ভে রাখা আছে।
এখন প্রশ্ন হলো ইসরাইলের এই হামলার কারণ কী এবং কেন এই সময়েই তারা হামলার পথ বেছে নিয়েছে?
বিআলো/সবুজ