ইসরায়েলি বর্বরতা: গাজায় প্রাণহানি ছাড়াল সাড়ে ৪৩ হাজার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে বর্বর হামলা চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। অব্যাহত হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু ফিলিস্তিনি। আহতের সারিও লম্বা হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় ইতোমধ্যে প্রাণহানি সাড়ে ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ১২৩ জন।
শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, নিহত এবং আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং লোকবল-সরঞ্জামের অভাবে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের একটি সিস্টেম্যাটিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি এবং এ ঘটনায় যথাযথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের স্বাধীন দুর্ভিক্ষ পর্যালোচনা কমিটি সতর্ক করেছে যে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ এড়াতে এবং মাসব্যাপী ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের মধ্যে ‘এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি প্রশমিত করতে’ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, তারা ৮ হাজার ১১৯ জন নিহতের তথ্য যাচাই করেছে। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক কম হলেও উভয় পক্ষই বলেছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী মানুষের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৫-৯ বছর বয়সী শিশুরা। নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শিশুটির বয়স মাত্র একদিন এবং সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি ছিলেন ৯৭ বছরের এক নারী।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
বিআলো/শিলি