উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর কোরিয়া এমন একটি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে যেটি ৮৬ মিনিট উড়ে দেশটির পূর্বে সাগরে পড়েছে। কোনো ক্ষেপণাস্ত্র এত দীর্ঘ সময় ধরে উড়ার রেকর্ড এটি প্রথম। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এ তথ্য দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছিল। সেটি ৭৩ মিনিট উড়ে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল। এবারের আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি কিছু ঊর্ধ্বমুখী করে পরীক্ষার জন্য ছোড়া হয়েছে। তাতে এটি প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে গেছে।
এর অর্থ হচ্ছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র যদি আরও নিচু করে ছোঁড়া হতো তাহলে আরও বেশি পথ অতিক্রম করতো। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। এই পরীক্ষা এমন এক সময়ে চালানো হয়েছে যখন দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি নানা ধরণের আগ্রাসী মনোভাব ব্যক্ত করছে উত্তর কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়া আগেই সতর্ক করেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সময় উত্তর কোরিয়া আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, উত্তর কোরিয়া এই পরীক্ষা চালানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন অস্ত্র তৈরি করা যেটি অনেক উঁচু দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত যেতে পারে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে শত্রুদের প্রতি আমাদের জবাব দেবার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘যথাযথ সামরিক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন
কিম জং আন।
তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই পারমানবিক অস্ত্র শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যে পদক্ষেপ যেটি কখনো পরিবর্তন হবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে চায়। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ-এর সহকারী অধ্যাপক কিম ডং ইয়াপ বলেন, উত্তর কোরিয়া এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে যেটি আকারে বড় এবং ভারী ওভারহেড থাকলেও যাতে আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে।
এদিকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা করা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কিছু প্রস্তাবের বিরোধী। ‘এর মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণিত হয় যে, উত্তর কোরিয়া তাদের জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা না করে তারা ক্রমাগত অবৈধ মারণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে।’ এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি মুখপাত্র সন স্যাভেট।
দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, উত্তর কোরিয়ার এই মিসাইল পরীক্ষার জবাবে দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এক বিবৃতিতে বলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, আমাদের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি তৈরি রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক মিসাইল সম্পর্কিত নানা তথ্য আমরা আমেরিকা ও জাপানের সাথে আদান-প্রদান করেছি।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসও এই মিসাইল পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিবেশী জাপান বলছে, তারা উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষা করার বিষয়টির দিকে নজর রেখেছে।
বিআলো/শিলি