এই অমানবিকতার শেষ কোথায়? কথা বললেই জরিমানা ৫ হাজার!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অসহায় গরিব দিনমজুর একটি পরিবারের পারিবারিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে তাদের সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। মসজিদে নামাজ পড়া, বাচ্চাদের মক্তবে পড়তে যাওয়া নিষেধসহ কেউ তাদের সাথে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। গত ২০ দিন ধরে অসহায় এ পরিবারটি অমানবিক জীবন যাপন করছে।
পরিবারটির একমাত্র কর্তা অটো রিকশা চালক মইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে কয়েকজন মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। আমাদের সাথে কেউ কোন কথা বলে না, আমার বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছে, আমার গাড়িতে কেউ ওঠে না। এই সমাজের কেউ আমাদের সাথে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার আইন করেছে। জরিমানার ভয়ে কেউ আমাদের সাথে কথা বলে না। আমার সন্তানদের মক্তবে পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই সমাজের কারো সাথে কথা বললে আমাদেরকেও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মইজ উদ্দিন বলেন, আমার অভাব অনটনের সংসার। প্রায় সময়ই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে। পারিবারিক সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে। এরচেয়ে জঘন্য নানান ঘটনা সমাজে ঘটে। তাই বলে কাউকে একঘরে করে রাখার আইন আছে শুনিনি। আমরা গরিব ও অসহায় বলে এই জুলুম চালানো হচ্ছে।
সমাজের কারা আপনার উপর এই জুলুমের নিয়ম করেছে, জানতে চাইলে মইজ উদ্দিন বলেন, আমি খেঁটে খাওয়া মানুষ। একটি অটো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। তবে এই সমাজ যারা চালায়, যারা বিত্তশালী ক্ষমতাবান তারা সবাই। না হয় আমাদের অপরাধ থাকলে তারা বিচার করবে কিন্তু একঘরে করার এই জুলুম তারা করতে পারতো না। কোরবানি ঈদের আগে তারা আমাদের একঘরে করে দেয়। ঈদের সময় সমাজের কেউ আমাদের কোন মাংস তারা দেয়নি। এমনকি গরিব বলে সমাজ থেকে যে একটা ভাগ পাই তা থেকেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে।
কলিজা ফেটে যায় এই ঈদে আমি আমার সন্তানদের ১ টুকরা মাংস কিনে খাওয়াতে পারিনি। আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকে। শুনেছি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর রেখেছে। সমাজের সবাই নাকি আমাদের একঘরে করার বিষয়ে স্বাক্ষর দিয়েছে। একজন লোকের প্ররোচনায় আমার পরিবারকে তারা একঘরে করে রেখেছে। আমাকে তারা বলেছে সমাজের সবার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি এই বিষয়ে কোন কথা বললে তারা নাকি আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই ভয়ে এতদিন আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি এই জুলুমের বিচার চাই। আমি এই অত্যাচারের শাস্তি চাই। কিন্তু কে করবে তাদের বিচার? কে দিবে তাদের শাস্তি? তারাই তো এই সমাজের জমিদার।
এমন ঘটনা তার ওয়ার্ডে ঘটছে, তিনি তা জানেন কিনা জানতে চাইলে ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন জানান, আমাকে ঐ সমাজ বলেছে তারা দিনরাত ঝগড়া বিবাদ করে, কেউ বাধা দিলে তাদের সাথেও ঝগড়া করে তাই তাদেরকে এই সমাজ থেকে বিতারিত করে দেওয়া হবে। তাদের একঘরে করে রাখা হবে। আমি বলেছি তাদের অন্যায় থাকলে বিচার করা হবে। কিন্তু কোন একঘরে করার নিয়ম নেই। আমি তাদের ১ মাসের সময় দিয়ে এসেছি। কিন্তু ঐ সমাজের লোকজন আমার কথা অমান্য করে এ কাজ করেছে।
এই অমানবিক এই জুলুমের বিপরীতে এই পরিবারটি আইনি কি প্রদক্ষেপ নিতে পারবে, জানতে চাইলে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। তারা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একটি পরিবারকে গত ২০ দিন যাবৎ মৌলিক ও সামাজিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে এই পরিবারটি এখন কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি বা পরিবারকে একঘরে করে রাখা আইন বহির্ভূত কাজ। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
বিআলো/তুরাগ