এক পোস্টেই খুঁজে পাওয়া গেলো ৩০ বছর আগে হারানো ২ বান্ধবীকে
ইবনে ফরহাদ তুরাগ: দীর্ঘকাল ধরে ৩০ বছর যাবৎ হারানো ৩ বান্ধবীর খোঁজ করছিলেন লিপিকা ইকবাল নামক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি। তারা চারজনই ছিলেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী। শেষবারের মতো আড্ডায় বসেছিলেন ১৯৯১ সালে এক বন্ধুর বিয়েতে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তাদের দুরত্ব বাড়ে, এক পর্যায়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সকলেই।
অবশেষে ৩০ বছর পর বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম, সংগ্রহশালা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করার পরপরই রাতারাতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিন জনের দুজনকে উক্ত পোস্টের মন্তব্য কলামেই খুঁজে পান তিনি।
গতকাল, ১৮ই মে (শনিবার) রাত আনুমানিক সারে নয় টায় স্মৃতিতে থাকা সম্বল ৩৪ বছর আগের একটি মাত্র পুরোনো ছবিসহ আবেগঘন সেই ফেসবুক পোস্টটি করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী লিপিকা ইকবাল। ক্যাপশনে বান্ধবীদের হারানো স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন:
“গত ৩০ বছর ধরেই খুঁজে চলেছি আমার এই তিন বান্ধবীকে। ছবির সবচেয়ে বামে বসে আছি আমি (লিপি)।
আমার পাশে টুটু, তার পরে সীমা, আর সবার শেষে সানী। আমরা ১৯৯০ সালে তেজগাঁও কলেজে বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হই। ওরা সবাই মগবাজারে থাকতো। আমি থাকতাম শেওড়াপাড়া।
যতদূর জানি-
বিয়ের পর সানী এলিফেন্ট রোডে ওর শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। আর কোন সূত্র আমার হাতে নেই দেশ থেকে বহুদূরে নিউইয়র্কে থাকি। ইচ্ছে হলেও সন্ধান নেওয়ার উপায় নেই ভেবে ভেবে যখন বিষণ্ন ভগ্নহৃদয় হয়ে গিয়েছিলাম, আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম- তখনই এই পেজের কথা মনে হলো।
আমার বান্ধবীদের কেউ, তাদের পরিচিতদের কেউ আছেন এখানে? আমাকে দিতে পারেন এদের কারো একজনের সন্ধান? অনেক ধন্যবাদ।”
রাতারাতি এক পোস্টেই বান্ধবীদের খুঁজে পাওয়ায় শুভকামনা জানিয়ে বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র প্ল্যাটফর্মের কর্ণধার গিরিধর দে বলেন, গত ৩০ বছর ধরেই খুঁজে চলেছি আমার এই তিন বান্ধবীকে’ শিরোনামে গতকাল রাতে যে পোস্টটি সারাদেশে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়েছে মূলত সেটির কাজ এবং প্রচার আমরাই করেছি। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করা লিপিকা ইকবাল নামে এক প্রবাসী নারী দীর্ঘকাল যাবৎ নানাভাবে খুঁজেও ছবিতে থাকা তাঁর বান্ধবীদের সন্ধান পাচ্ছিলেন না। দীর্ঘকাল যাবৎ নানাভাবে খুঁজেও যখন কোনো সন্ধান বের করতে পারছিলেন না তখন উনার মনে পড়ে আমাদের প্ল্যাটফর্মের কথা।
সংগ্রাহক ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠক গিরিধর দে বলেন, বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র প্রতিষ্ঠার পর ২০১৬ সাল থেকে দেশব্যাপী দুষ্প্রাপ্য দলিলাদি সংগ্রহ, চর্চা, গবেষণা, প্রচার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য নানাধরণের মানবিক ও সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে। যারই ধারাবাহিকতায় কোনোপ্রকার পারিশ্রমিক ছাড়া এ জাতীয় অসংখ্য কাজ করার সুবাদে পূর্বে থেকেই এই প্ল্যাটফর্ম দেশে বেশ সুপরিচিত।
তিনি আমাদের সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে তিনি এরপর উনার ভাগনে তৌফুর রহমান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এরপর আমরা যাবতীয় তথ্য নিয়ে উনাদের বান্ধবীদের একত্রে থাকা একটি পুরোনো ছবিসহ প্রচারের ব্যবস্থা করি এবং খুঁজে পেতে কাজ শুরু করি। প্রচারের পরপরই আমরা কিছু সময়ের ভেতরেই ছবিতে থাকা ২ জনকে (টুটু এবং সানী) প্রচার হওয়া পোস্টের মন্তব্য কলামেই খুঁজে পাই। পরবর্তীতে ওই রাতেই উনাদের সঙ্গে যোগাযোগও করানো হয়েছে। বাকি ১ জনের তথ্য নিশ্চিতের ব্যাপারেও কাজ চলছে। আশা করছি খুব দ্রুতই বাকি একজনকেও আমরা খুঁজে পেতে সক্ষম হবো।
গিরিধর দে আরো বলেন, খুব ভালো লাগছে। দীর্ঘকাল হারানো বান্ধবীদের মুহূর্তের ভেতরেই খুঁজে পেয়ে উনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন। কিছুসময় আগেও যেটি উনার নিকট স্বপ্নের মত ছিল তা মুহূর্তেই বাস্তব হওয়ায় খুব খুশি হয়েছেন তিনি, তাঁর পরিবার, বন্ধু, বান্ধবীরা সহ সারা দেশে এই ঘটনার সাক্ষী হওয়া লাখো মানুষ। সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো এবং একই সঙ্গে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র এর প্রতিটি সদস্যকে। এই মানুষগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণই প্রতিবার অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে দেয় এবং ইতিহাস সৃষ্টি করে। বন্ধুত্ব অমর হোক। সকলের জন্য শুভকামনা।
বান্ধবীদের খুঁজে পেয়ে পোস্টদাতা লিপিকা ইকবাল বলেন, ‘আমিতো ভাবতে ও পারিনি। আল্লাহ আমার মনের কথা শুনতে পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ’। এই পেজ না থাকলে তা কি সম্ভব হতো! ৩০ বছর এর একটা স্বপ্ন ৩০ মিনিটেই সত্যি হলো।
মূল পোস্টের লিংক (যে পোস্টে খুঁজে পাওয়া গেছে) : https://www.facebook.com/share/p/LztvbGjD37YF5wZb/?mibextid=oFDknk
বিআলো/নিউজ