এলিয়েনের খোঁজে এবার নতুন কৌশল
বিআলো ডেস্ক: মহাকাশে ভিনগ্রহীদের খোঁজ চালানোর ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই অবশ্য পৃথিবীর আকাশে ভিনগ্রহীদের স্পেসক্রাফ বা সসার দেখার দাবি করেন অনেকেই। কিন্তু সেই দাবির পক্ষে শক্ত প্রমাণ মেলেনি কখনো। বিজ্ঞানীরাও এসব খবরকে ভুয়া বলে মনে করনে। এমনকী আদৌ মহাবিশ্বের কোথাও এলিয়েন থাকার সম্ভবনা আছে বলে মনে করেন না অনেক বিজ্ঞানীই।
তবে ১৯৬০-এর দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক একটা সমীকরণের সাহায্যে মহাবিশ্বে এলিয়েন থাকার সম্ভাবনা কত সেটার হিসাব কষে দেখান। তারপরই অনেক বিজ্ঞানী এলিয়েনের বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। ড্রেকও বসে ছিলেন না। এলিয়েন খোঁজার মিশন হিসেবে একটা প্রকল্পে হাত দেন। সেই প্রকল্পের নাম সেটি অর্থাৎ সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ১৯৭০-এর দশকে সেটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। এরপর গত পাঁচ দশক ধরে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রকল্পটি আজও টিকে রয়েছে।
সেটির গবেষকেরা এখনো হাল ছাড়েনেনি। তারই প্রমাণ পেন স্টেটকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের নতুন মিশন। এলিয়েনের খোঁজে তাঁরা নতুন এক কৌশল আবিষ্কার করেছেন। নতুন পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত ধরনের রেডিও সংকেত বা টেকনো সিগনেচার খুঁজছেন। বোঝাই যাচ্ছে, যেন-তেন সংকেত তাঁরা খুঁজবেন না। এমন সংকেতের খোঁজ তাঁরা চালাচ্ছেন। যেগুলো হয়তো বহদূরে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের পাঠানো। সেই সিগন্যালগুলো আসতে পারে আলোক তরঙ্গ ও রেডিও তরঙ্গ হিসেবে।
ভিনগ্রহ থেকে আসা সংকেত এসব টেকনো সিগনেচার খুঁজে বের করতে তারা অতি শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছন। বিশেষ সেই টেলিস্কোপটির নাম মুরচিসন ওয়াইডফিল্ড। এই টেলিস্কোপ দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা সংকেত গ্রহণ ও বিশ্লেষণে সক্ষম। সেটির গবেষকেরা এলিয়েনের সংকেত খোঁজার জন্য বেছে নিয়েছেন ট্রাপিস্ট-১ গ্রহমণ্ডলকে। ট্রাপিস্ট-১ পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে। সেখানে একটি শীতল লাল-বামন নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে সাতটি পৃথিবী- সদৃশ গ্রহ। এই গ্রহগুলির কোথাও প্রাণীদের বাসযোগ্য স্থান থাকার যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি তরল পানির অস্তিত্ব আছে বলেও মনে করেন গবেষকেরা। তাই সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার বেশ ভালো সম্ভবনা আছে।
সাধারণত সেটি যে সংকেতগুলো অনুসন্ধান করে, সেগুলো একটা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের মধ্যেই সীমাব্ধ থাকে। তবে নতুন পদ্ধতিতে আরও বিস্তৃত সীমার কম্পাঙ্কও পর্যবেক্ষণ করবেন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, যখন ট্রাপিস্ট-১-এর গ্রহগুলো তাদের মাতৃনক্ষত্রের পেছন দিকে আড়াল হয়, তখন এগুলো থেকে কৃত্রিম সংকেত আসে কিনা সেটাই পর্যবেক্ষণ করছেন সেটির গবেষকরা। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সংকেত খুঁজে পাননি তাঁরা। তবে বিজ্ঞানীরা এখনি হাল ছাড়ছেন না।
প্রাথমিকভাবে, বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও) ব্যবহার করে সংকেতগুলির যাচাই বাছাই করেন। তারপর সেখান থেকে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য বের করে আনেন। এসব সংকেতকে প্রথমে প্রাকৃতিক উৎস থেকে আলাদা করা হয়। এরপর সম্ভাব্য টেকনো সিগনেচার শনাক্ত হলে, সেটি বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক রকম সংকেত আসে, যেগুলি প্রকৃতপক্ষে নক্ষত্র বা ব্ল্যাক হোলের মতো প্রাকৃতিক
বস্তু থেকে আসা। সেগুলো বাদ দিয়ে কৃত্রিম সংকেতের দিতে বিজ্ঞানীদের যত মনোযোগ।
এ ধরনের সংকেত শনাক্তের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মহাবিশ্বের বিশালতা। ‘স্ট্যাটিসটিক্যাল ট্রায়াঙ্গুলেশন’ পদ্ধতির মাধ্যমে কৌশলটি আরও
জটিলভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে গবেষকরা একাধিক উৎস থেকে আসা সংকেতের মধ্যে তুলনা করেন, এদের মধ্যে মিল খুঁজে বের
করেন।
নতুন কৌশলটি অনেকটা মহাবিশ্বের বিশাল অংশকে খুব দ্রুত পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই পদ্ধতির সাহায্যে এলিয়েনদের তৈরি সংকেত শনাক্ত করা সম্ভব হবে। আর সেটা হয়, তাহলে তৈরি হবে নতুন ইতিহাস।
বিআলো/শিলি