কক্সবাজারের চিংড়িজোনে বিপুল অস্ত্র ও কার্তুজসহ গ্রেফতার ৪
চঞ্চল দাশগুপ্ত, কক্সবাজার: দীর্ঘদিন চিংড়িঘের গুলোতে চলছে দখল-বেদখল, অপহরণ ও লুটের খেলা। প্রতিনিয়ত মুলত অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে ঘের দখল,অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধী কার্যক্রম চলে আসছে। এসব অপরাধ কর্মকান্ডের উপর নজরদারি শুরু করে র্যাব-১৫ কক্সবাজার।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন খ্যাত কোরালখালী এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-১৫ কক্সবাজারের একটি আভিযানিক দল।এসময় অস্ত্র, গোলাবারুদসহ চারজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে আটক করে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের একটি আভিযানিক দল।
আটককৃত আসামীরা হলেন- অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের প্রধান বেলাল হোসেন (৪৫), কামাল আহম্মেদ (৪২), আব্দুল মালেক (৩২), নুরুল আমিন (৩৫)। এরা সবাই চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়- ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ধাউনখালি এবং কলাতলীর মেরিন ইকো রিসোর্ট থেকে অবৈধ বিদেশি অস্ত্র চোরাচালান চক্রের দুই সদস্যকে একটি বিদেশী পিস্তল ও একটি রাইফেল এবং এ্যামুনেশন’সহ গ্রেফতার করে র্যাব।
এছাড়াও গত এপ্রিল মাসেও চকরিয়ার মাছের ঘেরে ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্ট চারজন ডাকাতকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৫। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে র্যাব।
তিনি বলেন, চকরিয়া উপজেলার বির্স্তর্ণ এলাকা জুড়ে সারা বছর মৌসুমে লবণ চাষ এবং বাকি মৌসুমে চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে।
মূলত লবণ চাষের মৌসুম শেষে চিংড়ি চাষের প্রস্ততি শুরু হলেই একদল সন্ত্রাসী ঘের মালিকদের নিকট চাঁদা দাবি করে। তাছাড়া অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে ঘের এলাকা দখল করে।
এছাড়া সশস্ত্র ডাকাত দল মাছের ঘেরে লুটপাট ও অন্যান্য নাশকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে বছরজুড়ে অত্র এলাকায় অস্থিরতা চলমান থাকে।
গত ১৯ জুন দিবাগত রাতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার গোলদিয়ায় ১০ একর বিশিষ্ট সাতটি ঘেরে (৭০ একর) হানা দেয় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এ সময় তারা অন্তত শতাধিক ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অস্ত্রের মুখে ঘের কর্মচারীদের জিম্মি ও হাত-পা বেঁধে করা হয় মারধর ও বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন।
এরপর একে একে ঘেরগুলো দখলে নেয় সন্ত্রাসীরা। এঘটনার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৫।
তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের চকরিয়ার কোরালখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় উদ্ধার করা হয় ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি, চিংড়ি ঘের দখল ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। তারা বেলাল, কামাল এবং মালেক আপন তিন ভাই।
তারা অস্ত্রধারী ডাকাতদের নিয়ে ‘বেলাল বাহিনী’ গড়ে তুলে মাছের ঘের দখল, লুটতরাজ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিলো। এই বাহিনীর সশস্ত্র ডাকাত সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ জন।
গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, লবণের মাঠ ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃত মালেক পেশায় একজন চিংড়ি ব্যবসায়ী। সে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করতো বলে জানায়। মালেক গ্রেফতারকৃত বেলাল এর নেতৃত্বে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় ৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃত নুরুল আমিন পেশায় একজন কৃষক এবং পাশাপাশি ডাকাত চক্রের সদস্য।
সেও গ্রেফতারকৃত বেলাল এর নেতৃত্বে এলাকায় ডাকাতি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় মারামারির ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, চিংড়িজোন থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ চার সন্ত্রাসীকে আটক করেছে বলে শুনেছি। কিন্ত র্যাব-১৫ এখনও পর্যন্ত আটককৃতদের থানায় হস্তান্তর করেনি।
বিআলো/শিলি