কারসাজি করে জেতা গেলেও দলেরই ক্ষতি: সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক: কারসাজি করে ভোটে জয়ের মুখ দেখা গেলেও আখেরে যে তা দলেরই ক্ষতি ডেকে আনে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই, আমরা সব সময় ভুলে যাই, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, ভোট সন্ত্রাস করে আপাতত দৃষ্টিতে জেতা যায়। কিন্তু আখেরে নিজের জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, আখেরে টেকা যায় না।
রোববার (২ মার্চ) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনায় বক্তব্য দেন নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা, কেউ এ জাতীয় উদ্যোগ নেবেন না; কেউ এ জাতীয় চেষ্টা করবেন না। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের পাশে আছি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়ে নাসির বলেন, ১৮ কোটি মানুষের কাছে আমার আবেদন থাকবে- আমাদের পাশে থাকুন। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুদ্ধে আছি। আমরা ওয়ার ফুটে কাজ করছি। অত্যন্ত সীমিত টাইম লিমিটের মধ্যে, আমরা খুব কষ্ট করে এগিয়ে যাচ্ছি।
সিইসি বলেন, আমি ভাবি…ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, ওনারা যদি একটা কাজ করতেন যে যখন দলগুলোকে ডাকেন, তাদের যদি জিজ্ঞেস করত, আপনারা কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান? যদি চায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে সই নেওয়া উচিত যে নির্বাচনী আচরণবিধি মানবেন, আপনার দলের প্রার্থী যদি কোনো গোলমাল করে, তাহলে দলীয়ভাবে অ্যাকশন নেবেন এবং সুন্দর একটা নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবেন।
সিইসি মনে করেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এভাবে লিখিত নেওয়া হয়, তাহলে সেটা দলগুলোর ওপর চাপ হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনের কাজও সহজ হয়ে যাবে।
মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া শুধু এখন আর অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও বলে জানান তিনি।
নাসির উদ্দীন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দেবে। এটা ভিন্ন ভিন্ন হবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। রাজনৈতিক দলগুলো যখন বিপরীতমুখী বক্তব্য দেয়, তখন তিনি আশাহত হন না। তিনি বিশ্বাস করেন, দলগুলো একপর্যায়ে একমত হবে।
খোলা মাঠে ভোটকেন্দ্র চান ইসি তাহমিদা-
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, “আমরা চারিদিকে দেখছি সংস্কার আর সংস্কার। ইসির কি সংস্কার হবে না? আমি চাই খোলা মাঠে নির্বাচনটা হোক। স্কুলের খোলা মাঠে নির্বাচন করতে কি পারব না? তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বললে তারা বলে এটা সম্ভব না। কিন্তু আপনারা সহযোগিতা করলে এটা করা সম্ভব।”
অবশ্য পরে একজন নির্বাচন কমিশনার আলোচনায় বলেছেন, এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়।
অন্য কমিশনাররা যা বললেন-
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, জনগণের অংশগ্রহণই হল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের শাসক নির্বাচন করে। ভোটারদের মতামত তখনই প্রতিফলন হবে, যদি ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের ভাবতে হবে আমরা কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ভেঙে যাবর কিন্তু মচকাব না। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সামজিকভাবে বিশ্বাস অর্জনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন তা করতে হবে। প্রথম পরীক্ষাই হবে আমাদের একটা ভালো নির্বাচন করা।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার দায় কেউ না কেউ নেবেন। যদি বিগত নির্বাচনগুলো ভালো না হয়ে থাকে, এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এর দায় ইসিকে নিতে হবে। কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।”
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার দিবস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্য ও ভোটারযোগ্যদের নিবন্ধন শেষ করে জুনের মধ্যে একটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
বাড়িবাড়ি হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার তালিকা থেকে ১৯ লাখ মৃতভোটারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৩ জনের।
ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ সকল পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিআলো/শিলি