কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান: জুলাইয়ের সেই রক্তাক্ত আন্দোলনের এক বছর
এফ এইচ সবুজ: ২০২৪ সালের ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরিণত হয় ইতিহাসের অন্যতম বড় গণঅভ্যুত্থানে, যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন।
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের একটি পরিপত্র ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর প্রতিবাদে ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামে। দ্রুত এই আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে সংগঠিত প্ল্যাটফর্মে রূপ নেয়।
১ জুলাই থেকে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শাহবাগ থেকে শুরু হয় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেই চলতে থাকে অবরোধ। আন্দোলনে অংশ নেয় গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’সহ বিভিন্ন অরাজনৈতিক শিক্ষার্থী সংগঠন ও প্ল্যাটফর্ম।
১৪ জুলাই রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা না পেলে রাজাকারেরা পাবে?-তার এই মন্তব্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। পরদিন ঢাকায় ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও ঘটে নিপীড়নের ঘটনা।
১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিরস্ত্র অবস্থায় সামনাসামনি গুলি করার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে আন্দোলন আরও বিস্ফোরণ ঘটে। আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আনেন এবং নতুন দাবি উত্থাপন করেন।
১৯ জুলাই ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুরু হয় ইন্টারনেট বন্ধ, সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার এবং দেশে দেশে সহিংসতা। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একাধিক শহরে প্রাণ হারান আন্দোলনকারীরা।
৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রাজপথে দখল নেয়। আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, সেদিন শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট মাসে সারাদেশে অন্তত ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। তাদের অধিকাংশই প্রাণ হারান রাইফেল ও শটগানের গুলিতে।
এই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্মরণসভা, দোয়া মাহফিল, আলোচনাসভা, গ্রাফিতি, রক্তদান, পথনাটক, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ।
বিআলো/এফএইচএস