কোরবানীর বর্জ্য অপসারণে মেয়রের ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম, মাঠে সক্রিয় কাউন্সিলররা
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ ঢাকা দক্ষিন সিটি এলাকা থেকে কোরবানীর বর্জ্য অপসারণের জন্য বেধে দেওয়া ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে মরিয়া ডিএসসিসির নেতৃবিন্দ। মেয়রের আলটিমেটাম রক্ষায় তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে মাঠ পর্যায়ে সদাপ্রস্তুত রয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। আজ ঈদের দিন বেলা ২টা থেকে দক্ষিন সিটির ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে একযোগে এই বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে ঘুরে ডিএসসিসির ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬১ ও ৬২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই এলাকা ও হাট থেকে কোরবানীর বর্জ্য অপসারণের ব্যপারে সম্পুর্ণ আশাবাদী তারা। এ ব্যপারে সার্বিক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির ৫৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাদবর জানান, মাননীয় মেয়র মহোদয় যে ঘোষণা দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই তা করার জন্য আমি শতভাগ কাজ করে যাবো মাঠে। আমার ওয়ার্ডে প্রায় ২২০০ গরু জবাই হয়েছে। বর্জ্য অপসারণের জন্য আমার ওয়ার্ডে প্রায় ২২৫ জন লোক কাজ করছে। এর মধ্যে সিআই এর আন্ডারে আছে ৭৫ জন, ময়লা অপসারণের জন্য বাসাবাড়ি থেকে যারা ময়লা নেয় তারা আছে ১০০ জন, আর বাহির থেকে আমরা কিছু পিকাপ ভ্যান নিয়েছি। পিকাপ ভ্যানে ময়লাগুলো উঠানোর জন্য আলাদা কিছু লোক নিয়োগ দিয়েছি। মাননীয় মেয়রের চিন্তা চেতনা নিয়েই কাজ করছি। প্রতিবারই ভালো করি। এবার যেনো ১ নাম্বার হতে পারি সে চ্যালেন্জটা নিয়েই মাঠে আছি, থাকবো।
ডিএসসিসির ৫৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক জানান, আমাদের এখানে কোরবানীর বর্জ্য অপসারণের জন্য ৬০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছে। এর মধ্যে ৩০ জন সিআইএর আন্ডারে আছে। ১০ জন সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়োগ দিয়েছে। এবং আমরা ময়লা উঠানোর জন্য কিছু পিকাপ গাড়ি ভাড়া করেছি সেখানে আমাদের সেচ্ছায় আরো ২০ জন লোক কাজ করবে। এই ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০০ গরু জবাই হবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য অপসারণ হবে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসির ৬০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, আমাদের ওয়ার্ডে প্রায় ৪৫০০ থেকে ৫০০০ গরু জবাই হবে। আমাদের ওয়ার্ড থেকে ময়লা অপসারণের জন্য লোক কাজ করবে ১২৫ জন। আমরা এবার ১৮ ঘন্টার মধ্যে ওয়ার্ড থেকে কোরবানীর বর্জ্য অপসারণ করার জন্য ব্যবস্হা গ্রহন করছি। এদের মধ্যে বাসা বাড়ি থাকে যারা ময়লা নেয় তারা আছেন, ওয়ার্ড এর পরিচ্ছন্ন কর্মী ছাড়াও আরও টেন্ডারে পেয়েছি ১০০ জন। যা সিটি কর্পোরেশন থেকে নিযুক্ত হয়েছে।
ডিএসসিসির ৬১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জুম্মন মিয়া জানান, আমাদের এখানে প্রায় ৫০০০ গরু জবাই হবে। আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মী আছে ২৫ জন, আমরা আরো ১০০ জন পেয়েছি। সাথে কিছু পিকাপ ও লোক নিয়েছি ময়লাগুলো উঠানোর জন্য। নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমরা আমাদের ওয়ার্ড থেকে ময়লা অপসারণ করবো।
ডিএসসিসির ৬২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোস্তাক আহমেদ জানান, আমাদের এখানে প্রতিবছর প্রায় ৫০০০ কোরবানীর পশু জবাই হয়ে থাকে। এবার আমাদের ৭০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ময়লা অপসারণের জন্য কাজ করবে। এর মধ্যে ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মী আছে ৩৫ জন ও সিটি কর্পোরেশন থেকে আরো ২৫ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা আরও কিছু পিকাপ, গাড়ি ও লোক নিয়েছি। মাননীয় মেয়র মহোদয়ের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই এই ওয়ার্ড, আবাসিক এলাকা ও গরুর হাট থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ডিএসসিসি সুত্র জানায়, এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায় বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন ১০ হাজার ২৫৭ জন কর্মী। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনই প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারস (পিডব্লিওসিএসপি) বা ভ্যান সার্ভিসের কর্মী। যাঁরা মূলত টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এর বাইরে প্রায় আরো ৭০০ কর্মী ওই দিনের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৫০০০ কর্মী দক্ষিন সিটিতে কাজ করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
সুত্র আরও জানায়, এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কোরবানির হাটের বর্জ্য ও কোরবানির পশুর বর্জ্য পৃথকভাবে অপসারণ কাজ করবে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তাদের ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। আর হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে-লোডার ও ১১টি টায়ার ডোজার নিয়োজিত করা হবে। এছাড়া দুই সিটিতেই ইতিমধ্যে পলিব্যাগ, ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন, টুকরি ও ফিনাইল বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় দক্ষিণ সিটির প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন। অনলাইনে যুক্ত হবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও। আজ বেলা ২টায় বর্জ্য অপসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
এছাড়াও কোরবানির হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ তদারকিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হল থেকে এ নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরিচালিত হবে। আজ ঈদের দিন বেলা দুইটা থেকে পরদিন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে মাঠে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে বাসিন্দারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ এবং ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য ও অভিযোগ জানতে পারবেন।
এর বাইরে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা যেখানে-সেখানে অস্থায়ী বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধে ছয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। কোরবানির পশুর হাট ও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কাজ তদারকির জন্য ১০টি দল গঠন করেছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ।
বিআলো/নিউজ