গণভবনকে জাদুঘর করতে কমিটি গঠন করা হবে: উপদেষ্টা নাহিদ
বিআলো প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’কে জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবারই জানানো হয়েছিলো। শনিবার অন্তর্বর্তী তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাদুঘর নির্মাণের জন্য শিগগিরই একটি কমিটি করা হবে।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে গণভবন পরিদর্শন করতে যান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এরইমধ্যে গণপূর্ত ও স্থাপত্যবিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষার কথাও তাদের জানিয়েছি। এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়তো আগামীকালের (রোববার) মধ্যেই কমিটি গঠন করা হয়ে যাবে। কমিটি হলে হয়তো আগামী সপ্তাহ থেকেই আমরা কাজ শুরু করবো। যাতে দ্রুত এটি উদ্বোধন করা যায়, সে জন্য দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটিতে কারা থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা জাদুঘর বিশেষজ্ঞ, স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারাই কমিটিতে থাকবেন। সেইসঙ্গে বিদেশ থেকেও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ বা এমন অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের পরামর্শও নিতে বলা হয়েছে।
এখানে কী ধরনের স্মৃতি ধরে রাখা হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের যে ৩৬ দিনের ঘটনাবলি, তার দিনলিপি এখানে থাকবে। আন্দোলনে যারা শহীদ রয়েছেন, তাদের স্মৃতি থাকবে, তালিকা থাকবে। এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরে… এই অভ্যুত্থানটা মূলত গত ১৬ বছরের আন্দোলনের মুহূর্ত হিসেবে আমরা ৫ আগস্ট পেয়েছিলাম। তাই এই ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদেরও তালিকা থাকবে, যাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে-এই সব বিষয়ে একটি প্রতিনিধিত্ব জাদুঘরে থাকবে।
সাংবাদিকদের নাহিদ বলেন, অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ৫ আগস্টের মুহূর্ত পেয়েছি। শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর বুকে এটি নির্দশন হিসেবে রাখতে চাই। যেকোনো স্বৈরাচারী, খুনি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রনায়কদের কী পরিণতি হয় এবং জনগণই যে ক্ষমতার আসল মালিক সে বিষয়টি একটি নির্দশন হিসেবে পুরো পৃথিবীর বুকে রাখার জন্যই আমরা গণভবনকে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নাহিদ বলেন, গণভবন যেই অবস্থায় আছে সর্বোচ্চ সেই অবস্থায় রেখে জাদুঘর নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও নিহতদের ইতিহাস থাকবে এই জাদুঘরে। পাশাপাশি গত ১৬ বছরে যত নিয়মবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন হয়েছে তারও দলিল থাকবে। মানুষের ক্ষোভের উপস্থাপনও থাকবে সেখানে। কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশনও থাকবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণভবন যেই অবস্থায় আছে যে ভগ্ন অবস্থায় আছে, সর্বোচ্চ সেই অবস্থায় রেখে জাদুঘর নির্মাণের চেষ্টা করা হবে। এখানে অনেক দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি আছে। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ রেখে গিয়েছে। সেগুলো যতটা সম্ভব রাখা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম বলেন, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে সেটা পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা) আছেন, সেখানেই থাকবেন।
তিনি আরও জানান, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা প্রায় শেষ দিকে। এ মাসে শহীদ পরিবারদের নিয়ে স্মরণসভা করা হবে। সেখানে তালিকা ঘোষণা করা হবে। তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। ফাউন্ডেশনের কাজের ঘোষণা হবে। শহীদদের নিয়ে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি আছে সেগুলোর ঘোষণা এ মাসেই হবে।
কোটা সংস্কারে দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হতাহতের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে জনতার গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
বিআলো/শিলি