গদি রক্ষায় চাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, ট্রাম্প পাশে থাকবে?
আর্ন্তজাতকি ডেস্ক: আগামী নির্বাচনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান হেরে যেতে পারেন বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। তবে মনে করা হচ্ছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাটাকে আরও প্রলম্বিত করার পরিকল্পনা করছেন এরদোয়ান। বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন ইস্তানবুলের মেয়র একরাম ইমামোগলু।
একারনে কঠিন সময় পার করছেন তুরস্ককে দুই দশক শক্ত হাতে শাসন করা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কখনো হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, আবার কখনো প্রেসিডেন্ট। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ চাপের মুখে পড়েছেন তুরস্কের ৭১ বছর বয়সী এই লৌহমানব।
তুরস্কে চলমান বিক্ষোভ গতকাল মঙ্গলবার সপ্তম রাত পেরিয়েছে। এই রাতেও হাজারো মানুষ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে রাজপথে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
ইস্তানবুলের মেয়র নির্বাচনে দুই দফা এরদোয়ান সমর্থিত প্রার্থীকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছেন এই ইমামোগলু। শেষমেশ ঘোষণা দেন- এরপর প্রেসিডেন্ট পদে এরদোয়ানের বিপক্ষে দাঁড়াবেন জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ। যে খবরে নড়েচড়ে বসেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ওই ঘোষণার কিছু দিনের মধ্যেই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয় ইমামোগলুকে।
ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ইস্তানবুলের রাস্তায় নেমে পড়েন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা উল্লেখ করেন তারা। জানান, ইমামোগলুকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন এই আন্দোলন।
স্থানীয় সময় বুধবার টানা সপ্তম দিনের মতো ইস্তানবুলের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়ে গেছেন আন্দোলনকারীরা। দিন দিন বাড়ছে এই বিক্ষেভের পরিসর। রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরেও ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভের দাবানল। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাকে গণঅভ্যুত্থানের লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ধারণা করা হচ্ছে- এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকাটা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, ইমামোগলু ইস্যুতে এরদোয়ানের ওপর তেমন কোনো চাপ নেই। এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ ছাড়া তেমন উচ্চবাচ্য করছে না যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ফলে, মনে হচ্ছে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া এরদোয়ানের গদিটা একপ্রকার বাঁচিয়েই দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ন্যাটোভুক্ত দেশ হওয়ার পরও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এরদোয়ান। এ জন্য বিগত বাইডেন প্রশাসন তার ওপর ছিল কঠোর। কিন্তু সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, ট্রাম্প নিজেও রাশিয়ার বিষয়ে নমনীয়। ফলে, এরদোয়ান হটানো কিংবা তাকে চাপ দেওয়ার পরিবর্তে নীরব থাকছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার এই নীরবতাই বাঁচিয়ে দিচ্ছে এরদোয়ানের গদি।
ওদিকে গতকাল রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
এরদোয়ান বলেন, যাঁরা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাঁদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।
বিআলো/শিলি