গলাচিপায় রামনাবাদ ফেরি পারাপারে চরম ভোগান্তি
“দাবি আর প্রয়োজন—গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউই”
মু. জিল্লুর রহমান জুয়েল, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীর ওপর অবস্থিত একমাত্র ফেরি ঘাটটি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ ফেরি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, আন্তঃজেলা গণপরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের গাড়িসহ নানা ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন পারাপার হয়।
কিন্তু বর্ষা মৌসুম এলেই এই ফেরি পারাপার রূপ নেয় দুর্ভোগের অন্যতম নাম হিসেবে। ঘাটের সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনও সময়মতো পার হতে না পারায় ঘটছে নানা দুর্ঘটনা ও সংকট।
ঢাকা থেকে এক মুমূর্ষু রোগী নিয়ে ফেরার পথে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্স চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জোয়ারের পানিতে ফেরির নামার রাস্তা ডুবে যায়। তাই ফেরিতে উঠতে কিংবা নামতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়।”
একজন পণ্যবাহী গাড়ির চালক জানান, “বরিশাল থেকে মালামাল নিয়ে এসেছি। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। আগে বহুবার দুর্ঘটনায়ও পড়েছি।”
ফেরিতে অপেক্ষমাণ এক অভিভাবক বলেন, “আমার কোলে অসুস্থ শিশু। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য এসেছি, কিন্তু দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। বলেও তো লাভ নেই, কেউ শোনে না।”
একজন চাকরিজীবী বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ চলছে। যারা সমাধান দিতে পারেন, তারাও নীরব থাকেন। দাবি আর প্রয়োজন—গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউই।”
ছাত্রছাত্রীদের ভাষায়, “স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে প্রতিদিনই ফেরি পার হতে হয়। বর্ষায় পানি বাড়লে ফেরি নিরাপদ হলেও তীরে এসে দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হয়।”
এ ব্যাপারে রামনাবাদ ফেরির ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিবু লাল এন্টারপ্রাইজ-এর একজন কর্মকর্তা জানান, “জনদুর্ভোগ হচ্ছে, আমরা দুঃখিত। ইতোমধ্যে ফেরির এপ্রোচ রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু টানা খারাপ আবহাওয়ার কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা চলছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিনের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ এড়াতে ফেরির দুই পাড়ে টেকসই রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নইলে প্রতি বছরই এই ভোগান্তি পিছু ছাড়বে না।
বিআলো/সবুজ