ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বিপর্যস্ত উপকূল ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান
সম্পাদকীয়: ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণ গেছে অন্তত ১২ জনের। সরকারি তথ্যেই জানা যায়, অন্তত ৩৭ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলের অনেক স্থানেই বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
খবরে দেখা যায়, কেবল খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ৬১টি কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও আংশিক, কোথাও পুরোপুরি ধসে গেছে। গাছপালা ও বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। ফসলি জমি নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্বিতীয় দিনেও কয়েক লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় পুরো উপকূলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাজধানী ঢাকারও অনেক রাস্তায় দীর্ঘ জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। রাজধানীতেও দুজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, একজন বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করে, অন্যজন বিদ্যুতায়িত টিনের বেড়ার সংস্পর্শে এসে মারা গেছে। বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই এখানকার মানুষ টিকে আছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্যোগের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে তীব্রতা। এর প্রমাণও আমরা পাচ্ছি। ১৯৯১, ১৯৯৭, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। তার পরও প্রায় প্রতিবছরই এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। এর মধ্যে আছে ঘুর্ণিঝড় মোরা, ফণী, বুলবুল, আম্ফান, ইয়াস, গুলাব, জোয়াদ, সিত্রাং ও সর্বশেষ রিমাল।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের এমন বাড়াবাড়ি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু? ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছিল উপকূল রক্ষা বাঁধগুলোকে আরো উঁচু ও মজবুত করে গড়ে তোলা, উঁচু ও বড় ঢিবি তৈরি করে গবাদি পশু রক্ষার ব্যবস্থা করা এবং ব্যাপক সংখ্যায় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য। কারণ দুর্যোগের সময়ও মানুষ গবাদি পশু ফেলে দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। বাস্তবতা হলো, সাড়ে তিন বছর মেয়াদের ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ সাত বছরে অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পগুলোরও প্রায় একই অবস্থা।
কাজের মান নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। না হলে পাঁচ থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাসে এত বেশি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিভাবে? বাঁধের সুরক্ষা কিংবা দেখভাল করা নিয়েও রয়েছে উদাসীনতার অনেক অভিযোগ। এই সুযোগে কিছু লোভী ও প্রভাবশালী মানুষ বাঁধের ক্ষতি করে জমিতে নোনা পানি ঢোকায় বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য। এসব স্থানে বাঁধ দ্রুত ভেঙে যায়। উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরুরি। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এলেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে কোটি কোটি গ্রাহককে কয়েক দিন ধরে অন্ধকারে রাখা কোনো যুক্তিসংগত ব্যবস্থা নয়। আমরা মনে করি, অবিলম্বে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুততম সময়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
বিআলো/শিলি