জনসংযোগ : দোরগোড়ায় পরিবর্তনের প্রত্যাশা-প্রচারণায় এগিয়ে বিএনপি প্রার্থী
ঢাকা-৪ আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ
মানুষের দোরগোড়ায় পরিবর্তনের প্রত্যাশা-প্রচারণায় এগিয়ে বিএনপি প্রার্থী তানভীর আহমেদ রবিন
সুমন চৌধুরী: আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। টানা ১৭ বছর পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ পাবেন দেশবাসী- এ প্রত্যাশায় ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ করা যায়। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-৪ আসন।
ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা ও আশপাশ এলাকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে দেখা গেছে নির্বাচনী সরগরমের পাশাপাশি কিছুটা অনাগ্রহও। ভোটারদের দাবি-প্রার্থীদের জনসংযোগ এখনও প্রত্যাশার তুলনায় কম। তবুও প্রার্থীরা মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, আর ভোটাররা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে খোঁজ রাখছেন পছন্দের প্রার্থী সম্পর্কে।
ভোটারদের ভাষ্য, যাকেই ভোট দেব, আগে তার শিক্ষা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব, এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ-সব দিক দেখে নেব। শুধু নাম-ডাক নয়, এলাকার উন্নয়নে কে কাজ করবে সেটিই সবচেয়ে বড় বিষয়। ঢাকা-৪ আসনে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একাধিক প্রার্থী। ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপির তানভীর আহমেদ রবিন। জামায়াত ইসলামের দাড়ি পাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সৈয়দ জয়নুল আবেদিন। হাত পাখা প্রতীকে লড়ছেন সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের নেতা।
‘১৪ পুরুষের শিকড় এই এলাকায়’ বলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ রবিন
ঢাকা-৪ আসনে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মনোনীত তানভীর আহমেদ রবিন। জাতীয় পর্যায়ে এটিই তার প্রথম নির্বাচন। সম্প্রতি তিনি শ্যামপুর, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
এ আসনের বড় সমস্যা গ্যাস সংকট ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার দুরবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এসব অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে জনভোগান্তি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ রবিন নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত, স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এ আসনে একটি সরকারি হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন।
নিজের রাজনৈতিক যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের আগে দেশে ফিরলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আর ফিরে যেতে পারিনি। তখন আমার বাবা আলহাজ্ব সালাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আমরাও দেশে না থাকা অবস্থায় একাধিক মামলায় জড়াই। সেই কঠিন সময়ে বাবার পক্ষ হয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াই। তাদের সঙ্গে কাজ করতে করতেই মানুষের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুধু তিন পুরুষ নয়-১৪ পুরুষ ধরে এই এলাকার বাসিন্দা। শ্যামপুর-কদমতলীর মানুষই আমাদের পরিবারকে বড় করেছে। আমাদের মুরুব্বিরা জীবনের বড় সময়টা মানুষের সেবায় কাটিয়েছেন, আমিও সেই পথেই হাঁটতে চাই।
জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচনকে ঘিরে নির্দেশনা ও পরিবর্তনের বার্তা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, এবারের নির্বাচন গতানুগতিক নয়-এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দিতে হবে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন শেষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়। একই সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটেরও আয়োজন করা হবে। সে অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে ব্যালট পেপারে নির্বাচন হবে, ভোট পর্যবেক্ষণে সিসিটিভি থাকবে নির্বাচন ভবনে।
স্থানীয় ৫৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান কাজল বলেন, আমরা আলহাজ্ব সালাহউদ্দীন আহমেদের হাতে গড়া কর্মী। বর্তমানে রবিন আংকেলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বুঝতে পারছি-তিনি তার বাবাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মন খুলে মিশে যান। আপনাদের বললে অবাক হবেন-তিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মানুষের ভিড়ে যেন মুহূর্তেই মিছিল তৈরি হয়ে যায়। আমাদের লিডার এতটাই জনপ্রিয় যে তাকে ‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’র চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয়।
ভোটারদের আশা-আকাক্সক্ষা
মোহাম্মদবাগ এলাকার ভোটার বয়োজ্যেষ্ঠ মাসুদ বলেন, প্রার্থীদের আমরা দেখতে চাই। যারা সত্যিকারের জনগণের প্রতিনিধি হতে চান, তারা ভোটের আগে মানুষের কাছে আসবেন-এটাই প্রত্যাশা। এ এলাকার একাধিক চাকরিজীবী ভোটার জানান, আমরা শুধু জনপ্রিয় মুখ চাই না-দক্ষ, শিক্ষিত ও এলাকার সঙ্গে যুক্ত প্রার্থী চাই। যারা রাজনীতি বোঝেন, উন্নয়ন বোঝেন-তাদের পক্ষে ভোট দেব।
একজন ভোটার আরো বলেন, আমরা চাই, যিনি এমপি হবেন তিনি পাঁচ বছর এলাকায় থাকবেন, মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবেন। শেষ কথা, ঢাকা-৪ আসনে প্রার্থীরা যার যার মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিন শেষে যিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করতে পারবেন-শেষ ভালোটা তার পক্ষেই যাবে। এই মুহূর্তে এ আসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী তানভীর আহমেদ রবিন। আর ভোটারদের প্রত্যাশা-একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
বিআলো/এফএইচএস



