জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি এশিয়ায়: জাতিসংঘ
নিউজ ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ২০২৩ সালে এশিয়া ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগবিধ্বস্ত অঞ্চল। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ এই তথ্য জানিয়েছে। বন্যা এবং ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই অঞ্চলে প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রধান কারণ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আর এশিয়া অতিমাত্রায় দ্রুতগতিতে উষ্ণ হচ্ছে বলে জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) জানায়, এশিয়ায় তাপপ্রবাহের প্রভাব তীব্রতর হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি গলে যাওয়া হিমবাহগুলো এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ডাব্লিউএমও আরো জানায়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে দ্রুতগতিতে উষ্ণ হচ্ছে এশিয়া।
গত বছর এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সালের গড় তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ডাব্লিউএমওর প্রধান সেলেস্তো সাওলো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিবেদনের উপসংহারগুলো ভীষণ মর্মান্তিক। খরা ও তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট লাগাতার জলবায়ুর চরম বৈরী পরিস্থিতির প্রভাবে এই অঞ্চলের অনেক দেশই ২০২৩ সালে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর প্রত্যক্ষ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ও তীব্রতা বাড়িয়ে তুলেছে।
বিষয়টি সমাজ, অর্থনীতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে মানুষের জীবন ও পরিবেশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। ‘দ্য স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া-২০২৩’-এর প্রতিবেদনে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার মতো মূল জলবায়ু পরিবর্তনের সূচকগুলো ত্বরান্বিত হওয়ার হারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলো এই অঞ্চলের সমাজ, অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ডাব্লিউএমও বলেছে, এশিয়া ২০২৩ সালে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানিসংক্রান্ত ঝুঁকিতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ বিধ্বস্ত অঞ্চল হিসেবে আগের অবস্থান ধরে রেখেছিল।
২০২৩ সালে এশিয়ায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বাতাসের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল, যা ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ০.৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৯৬১-১৯৯০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ১.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
বিশেষ করে পশ্চিম সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত উচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে জাপান সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্মকাল প্রত্যক্ষ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া হিমালয় থেকে শুরু করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। এরই মধ্যে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে দেখা দিয়েছে খরা। ওই অঞ্চলে বছরের প্রায় প্রতি মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। গত বছর এশিয়ায় পানিসংক্রান্ত আবহাওয়ার ঝুঁকির সম্পৃক্ত ৭৯টি দুর্যোগের খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্যোগের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিল বন্যা ও ঝড়। এতে দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং ৯০ লাখ মানুষ এসব দুর্যোগের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিআলো/শিলি