জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান
নিজস্ব প্রতিনিধি: ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’। গত বছরের ৩১ আগস্ট রাজশাহীর মিষ্টি পানকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান এই নিবন্ধনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ রাজশাহীর মিষ্টি পানকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন।
২৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সকালে নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, রাজশাহী জেলায় উৎপাদিত পান এখন থেকে ‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’ হিসেবে পরিচিত হবে। জিআই নিবন্ধন পাওয়ার ফলে রাজশাহীর পান বাংলাদেশ তো বটেই, দেশের বাইরের অন্য পানের চেয়েও এটি উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর মিষ্টি পান জিআই পাবে এটা তো আগেই নির্ধারণ হয়েছে। নির্বাচনের কারণে ব্যালট ছাপানোর ভিড়ে গেজেট হতে একটু দেরি হয়েছে। তবে আশা করি, দুই-এক দিনের মধ্যে গেজেট হয়ে যাবে। জিআই পণ্যের জন্য সব ফরমালিটি সম্পন্ন ছিল।
জেলা প্রশাসক বলেন, এটি তার চাকরিজীবনে সবচেয়ে অনেক বড় অর্জন। পাশাপাশি দুই জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে নাটোরে তার হাত ধরে কাঁচাগোলা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার রাজশাহীর মিষ্টি পান জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে।
এমন খবরে আনন্দের জোয়ার বইছে। জেলার সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয় বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায়। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় চাষিদের কাছে এটি অর্থকরী ফসলে রূপ নিয়েছে।
সর্বশেষ নাটোরের জেলা প্রশাসক থাকাকালে শামীম আহমেদ নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ রাজশাহীর কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসল মিষ্টি পানের জিআই নিবন্ধন চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) আবেদন করেছিল। আবেদনের ছয় মাসের মাথায় মিলেছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের শাড়ি ছাড়াও গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, যশোরের খেজুর গুড় ও নরসিংদীর কলা ও লটকনকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে গেজেট আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ১৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি রয়েছে। বিভাগ হিসেবে ধরতে গেলে রাজশাহী এগিয়ে। এই বিভাগের সাতটি পণ্য পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। রাজশাহী সিল্ক ছাড়া বাকি ছয়টি পণ্য খাদ্য। এর মধ্যে রয়েছে চার জাতের আম ছাড়াও বগুড়ার দই ও নাটোরের কাঁচাগোল্লা। জিআই পণ্যের তালিকায় থাকা রাজশাহী-চাঁপাইয়ের ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, আশ্বিনা আম। এছাড়া বগুড়ার দই এবং নাটোরের কাঁচাগোল্লা। আর সর্বশেষ জিআই পণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে রাজশাহীর মিষ্টি পান। এই মিষ্টি পানের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে সুখ্যাতি।
মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের কইকিড়ি এলাকার পান চাষি রায়হানুল হক বলেন, রাজশাহীর মিষ্টি পান জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল এটা আমাদের কাছে গর্বের ও খুশির বিষয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সারাবিশ্ব চিনল বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের পানকে। রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয় বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায়। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় চাষিদের কাছে পান অর্থকরী ফসল।
পান ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখন সারাবিশ্বের মানুষ রাজশাহীর পান চিনবে। রাজশাহীর পান ব্র্যান্ডিং হলো বিশ্বব্যাপী। এখন থেকে চাহিদা বাড়বে রাজশাহীর পানের। ফলে বিক্রি ভালো হবে। এতে করে অতীতের যে কোনো সময়ের ভালো দাম পাবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, তানোর, পবা ও পুঠিয়া উপজেলায় ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে পানের বরজ আছে।
এসব অঞ্চলে পান চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার ৯০০ কৃষক। গত বছর জেলায় ৭৬ হাজার ৬৭৮ টন পান উৎপাদন হয়। রাজশাহীর পান দেশের অন্য স্থানের তুলনায় মিষ্টি। তাই এর চাহিদাও বেশি।
বিআলো/শিলি