টেকসই বাঁধ নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে
সম্পাদকীয়: সামুদ্রিক ঝড় মোকাবিলা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় ঘনঘন সামুদ্রিক ঝড় সৃষ্টি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী দিনে সামুদ্রিক ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ বাস্তবতায় সামুদ্রিক ঝড় মোকাবিলায় জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। এর অংশ হিসাবে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকজনের প্রাণহানিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোনো কোনো এলাকায় চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। বস্তুত সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডবে বারবার বিপর্যস্ত হন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন স্থানে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষের অবর্ণনীয়
দুর্ভোগের খবরও আমরা পেয়েছি।
বরাবরের মতো এবারও দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার কয়েকদিন আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বিষয়টি বিশেষ আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। এসব বাঁধ সংস্কারে প্রতিবছর ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। বাঁধ সংস্কারে অপর্যাপ্ত বরাদ্দের বিষয়টিও
আলোচনায় আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানহীন কাজ, নকশায় ত্রুটি ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধ টেকসই হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর কারণেই বারবার বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। বাঁধ তৈরির পর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়েও জোর দেওয়া দরকার। এ কাজে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী দিনে সামুদ্রিক ঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, সেহেতু টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।
উপকূল এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী। এ পেশার মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। জাতীয় অর্থনীতিতেও রয়েছে তাদের বড় অবদান। কাজেই উপকূলবাসীর জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বারবার আঘাত হানছে, সেহেতু উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিও চাঙা থাকবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব রাখবে। সাধারণত বাঁধ নির্মাণের পরই দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। আমরা মনে করি, বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলা দরকার। এসব কাজে সঠিক উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত করতে হবে; অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপকূলীয় বাঁধ এবং উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্পের সমন্বয়সাধনে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এ ধরনের প্রকল্প থেকে বেশি মাত্রায় সুফল পেতে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, দরকার অব্যাহত গবেষণাও।
বিআলো/শিলি