ট্রাম্পের পক্ষে ইলন মাস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জ্যান্ডার মুন্ডি যখন কর্মস্থলে অন্যান্য সব দিনের মতই একটি ব্যস্ত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তিনি খবরটি শোনেন; প্রযুক্তি জগতের ধনাঢ্য ব্যক্তি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ফোলসম শহরের কাছাকাছি একটি স্কুলে বক্তব্য রাখছেন।
মুন্ডি তখন নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন, কবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটিকে এই শহরেই পাওয়া যায়? ফোলসম বেশ শান্ত একটি অঞ্চল, যার জনসংখ্যা মাত্র নয় হাজার। এখানকার বাসিন্দারা সাধারণত রাজনীতি সম্পর্কে খুব একটা খোলাখুলি কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
২১ বছর বয়সী মুন্ডি একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না বলেই স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু ইলন মাস্কের কথা শুনতে ভিড় তৈরি হতে দেখে উত্তেজনা অনুভব করেন মুন্ডি, এবং নিজেও আগ্রহী হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলটি থেকে ফেরার সময় তিনি কমালা হ্যারিসের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকেই বেশি ঝুঁকে গিয়েছিলেন বলে জানান মুন্ডি।
মুন্ডি বলেন, যদি এরকম কেউ আপনাকে বলে যে এই নির্বাচনই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চলেছে, কেবল আগামী চার বছরের জন্য কে রাষ্ট্রপতি হবেন তা নয়, বরং বিশ্ব কেমন হতে চলেছে… আমি মনে করি এটি একটি বিশাল ব্যাপার। এটা গুরুত্বপূর্ণ, খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইলন মাস্ক, যিনি ইতিপূর্বে প্রযুক্তি জগতে উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা সম্পন্ন একজন প্রতিভা হিসেবে নিজের একটি ইমেজ গড়ে তুলেছেন, এবং রাজনীতির একেবারে ভেতরে না ঢুকে পাশাপাশি থেকেছেন, তিনি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
আমেরিকার জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিতে, ৫৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রিপাবলিকানদের নির্বাচিত করতে চেষ্টা করছেন তার সময়, জ্ঞান আর যথেষ্ট বিনিয়োগের মাধ্যমে – দেশের অভিজাত ব্যবসায়ীদের মধ্যে এটা সত্যিই বিরল, কারণ তারা ঐতিহ্যগতভাবেই পিছনে থেকে রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পছন্দ করেন। এটি ঐতিহ্যবাহী বড় বড় ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব বা সিইওদের প্রচলিত আচরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যারা তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য দাতাদেরকে খুশি করতে হ্যাম্পটনের বিশাল বাড়িতে ব্যয়বহুল ভোজ আয়োজনের জন্যই বেশি পরিচিত।
ফলে স্বভাবতই ইলন মাস্কের ব্যতিক্রমী হওয়ার পিছনে তার অনুপ্রেরণা বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা। মিশিগান ইউনিভার্সিটির রস স্কুল অফ বিজনেসের উদ্যোক্তা বিভাগের চেয়ারম্যান এরিক গর্ডন ব্যাখ্যা করেন, সিইওদের ঐতিহ্যগত কার্যক্রম জনসাধারণের সম্মুখে হয় না। কিন্তু মাস্ক এটি বেশ জোরেশোরে প্রকাশ্যে এবং গর্ব করে করেন, যা সম্ভবত নিজেকে আলোকিত করে তুলতেই করা।
অলাভজনক ট্র্যাকার প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন সিক্রেটস’ বলছে, মাস্কের ট্রাম্প- সমর্থিত রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি – আমেরিকা প্যাক ইতোমধ্যেই এই নির্বাচনের জন্য ১১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
উপরন্তু, মাস্কের নিজস্ব অবদান তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে বড় দাতাদের একজন করে তুলেছে। কথিত আছে যে সুইং স্টেটগুলিতে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এই প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য ইলন মাস্কের একজন প্রধান লেফটেন্যান্ট স্টিভ ডেভিসকে নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি স্পেসএক্স, এক্স ও বোরিং কোম্পানিসহ মাস্কের অন্যান্য কোম্পানিগুলির জন্যও কাজ করেছেন।
বিআলো/শিলি