ঠিকাদারকে প্রকাশ্যে হাতুড়িপেটা, তিন যুবক আটক
কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে ঠিকাদারের ওপর হাতুড়ি বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িত তিন যুবককে আটক করেছে র্যাব। মঙ্গলবার সকালে শহরের মজমপুর ও চৌড়হাস এলাকার নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
পরে হাতুড়িপেটায় গুরুতর আহত ও প্রাণভয়ে আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদার শাহিদুর রহমান মিন্টু চার যুবকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
তবে বাদীর অভিযোগ, থানায় তাকে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বর্ণনা শুনে লিখিত অভিযোগ টাইপ করা হয়। তবে সেখানে হামলার ইন্ধনদাতাসহ মূল অভিযুক্তদের নাম না থাকায় তিনি এজাহারে স্বাক্ষর দিতে রাজি হননি। পরে থানার ওসি তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিলে স্বাক্ষর করেন।
আটককৃতরা হলেন- মোকাদ্দেস হোসেন (৩৫), আমিরুল ইসলাম বেল্টু (২৮) ও জহুরুল ইসলাম (২৭)। এরা সবাই শহরের মজমপুর ও চৌড়হাস এলাকার বাসিন্দা। তবে র্যাবের হাতে আটক তিন যুবককে মডেল থানার সোপর্দ করা হয়েছে- এমন কোনো তথ্য জানেন না বলে দাবি করেন মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল আলম।
মামলার পর ঠিকাদার শাহিদুর রহমান মিন্টু বলেন, আমার ইচ্ছা অনুযায়ী মামলা হয়নি। থানায় বসিয়ে রেখে পুলিশ তাদের ইচ্ছামতো এজাহার তৈরি করে আমাকে দিয়ে জোর করে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। এতে মূল অভিযুক্তদের বাদ দেয়া হয়েছে। চুনোপুঁটিদের আসামি করা হয়েছে। এরা জামিনে বের হয়ে ফের হামলা করবে। এদের ইন্ধনদাতারা প্রভাবশালী।
তিনি বলেন, ওসি আমাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। আমি নির্দেশদাতা ও হামলায় অংশ নেয়া ক্যাডারদের গডফাডারদের নাম বললেও পুলিশ তাদের আসামি করেনি।
র্যাব-১২ এর একটি সূত্র জানায়, সোমবার হামলার পর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে মাঠে নামে র্যাবের একাধিক টিম। র্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালের দিকে তিনজনকে আটক করে তারা। বাকিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারেও কাজ করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
এদিকে এতবড় একটি ঘটনা ঘটলেও কুষ্টিয়ার পুলিশ অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছে। তাদের কোনো তৎপরতা নেই। বরং অভিযুক্তদের বাঁচাতে কুষ্টিয়া মডেল থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়ার্ডন লিডার ইলিয়াস খান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের আগে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম বলেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আটককৃতদের থানায় পাঠানো হয়েছে।
র্যাবের ওই সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরে সড়কের কাজে টেন্ডার জমা দেয়া নিয়ে তার ওপর হামলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বিষয়ে উঠে এসেছে। এদিকে সোমবারের ঘটনায় কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জন অংশ নেয়। কয়েক দফা ঠিকাদার শাহিদুর রহমান মিন্টুর ওপর হামলা করে তারা। ওপর মহলের কয়েকজন নেতার নির্দেশে এমন হামলা হয়েছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার শাহিদুর বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এতে বরকতসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আটকদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদারের ইচ্ছা অনুযায়ী মামলা হয়েছে। পুলিশের কোনো চাপ নেই। তাকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।
উল্লেখ্য, সোমবার ঠিকাদার শাহিদুর রহমান শহরের রাইফেল ক্লাব এলাকায় হামলার শিকার হন। তাকে প্রকাশ্যে হাতুড়িপেটা করা হয়। ঠিকাদারি কাজে অংশ নেওয়ার কারণে হামলা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার ওপর হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।