ডেমরায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার তদন্ত ও জবাবদিহি চায় কদমতলী থানা প্রেস ক্লাব
ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ ডেমরায় ইষ্টার্ন হাউজিং প্রকল্পের অনিয়মের ভিডিও চিত্রধারণ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করে “কঠোর শাস্তির দাবিতে” ডিএমপির ওয়ারী বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কদমতলী থানা প্রেস ক্লাব (কেটিপিসি)।
সম্প্রতি, ঢাকায় বিগত (২২ এপ্রিল) থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা ও তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকদের অধিকার দমিয়ে রাখার লক্ষে, সংবাদ সংগ্রহ ও তা প্রকাশের জের ধরে কিছু চিন্হিত দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী গংদের দ্বারা সাংবাদিকদের ওপর চলমান হামলা ও সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে গত ২ মে (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে কেটিপিসি এ আহ্বান জানায়।
কেটিপিসি বলেছে, ডেমরাতে অনিয়মের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক আওয়ার বাংলাদেশ পত্রিকার ৫ জন সাংবাদিক ইষ্টার্ন হাউজিং প্রকল্পের গংদের সন্ত্রাসী হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। কেটিপিসি’র বিবৃতিতে ডেমরায় হামলার স্বীকার হওয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বক্তব্য রয়েছে। তারা সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
কেটিপিসি’র এক বিবৃতিতে- দৈনিক আওয়ার বাংলাদেশ পত্রিকার গুরুতর আহত সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম বলেন, থানায় পুলিশকে অবগত করেও শেষ রক্ষা হয়নি আমাদের। বাংলাদেশে তাহলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আর রইলো কোথায়। যারা এই আইন ও এই সমাজ তৈরি করেছে, তারা চায় সাংবাদিকরা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকুক। অতি দ্রুত ওরা জামিন পেয়ে গেলো, আমি তো অবাক! ওরা অন্য যায়গায়ও এই ঘটনা ঘটিয়ে জামিন পেয়ে যাবে এবং তাদের সাহস বেড়ে যাবে। তখন তারা সমাজে আরো বেশি বেশি হামলা ও অপরাধ করার সাহস পাবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
একই ঘটনায় হামলার স্বীকার হওয়া আরেক সাংবাদিক সজিব বলেন, টানা ২০ মিনিট অতর্কিত হামলার করার পর সেখান থেকে কয়েকজন পালাতে সক্ষম হই আমরা। তারপর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে। আমরা সঠিক সময়ে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও, মামলাটিতে সুবিচার পেতে ফৌজদারী ধারাগুলোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সাংবাদিকদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনায়ও মামলার ধারা হালকা করে সুধু মারামারির ধারা দেওয়া হয়েছে। হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন গ্রেফতার হলেও তারা ২ দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছে। বাকি ৩ জন এখনো পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে কতটা তদন্ত হলো আমরা জানি না। পুলিশের ভুমিকা এখন নীরব।
মামলার বাদী মাকসুদুল আলম রবি বলেন, এই ঘটনায় সামান্য মারামারির ধারা ৩২৩,৩২৪,৩২৫ দেয় পুলিশ। তাই আসামীরা ২ দিনের মধ্যে খুব দ্রুত (২৪ এপ্রিল) জামিন পেয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমদের মেডিকেল সার্টিফিকেট পেলেই মামলাটিতে ৩২৬ ধারা সংযুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডেমরা থানার ওসি।
কদমতলী থানা প্রেসক্লাবের মুখপাত্র বরাত দিয়ে কেটিপিসি’র সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসী বাহিনীর পাশাপাশি সাংবাদিকরা পুলিশি আইন দ্বারাও আক্রান্ত হয়েছেন। ডেমরার ইষ্টার্ন হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে তথ্যচিত্র ধারণ করতে যাওয়া সেই ৫ জন সাংবাদিকের ওপর হামলার দ্রুত তদন্ত ও স্বচ্ছ জবাবদিহিতা দেখাতে হবে। তারা বলেন, পুলিশকে অবশ্যই সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে এবং নিরাপদে তথ্য অধিকার আইনে বিভিন্ন বিষয়ে খবর সংগ্রহের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। সবার আগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই তো সমাজে সুবিচার সৃষ্টি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
কদমতলী থানা প্রেসক্লাব (কেটিপিসি) ডেমরায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত আরো কয়েকজন সাংবাদিকের বক্তব্য তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। কেটিপিসি বলছে, মন্তব্যের জন্য তারা ডেমরার ইষ্টার্ন হাউজিং কতৃপক্ষ, ডেমরা থানা পুলিশ ও এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন (ওয়ারী) পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তাদের থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
আগে যা ঘটেছিলোঃ সম্প্রতি রাজউক-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ উপায়ে ভবন নির্মাণের ভিডিও চিত্র ধারণ করার সময় সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এই হামলায় গুরুতর আহত হন দৈনিক আওয়ার বাংলাদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শরিফুল ইসলাম ও মাকসুদুল আলম রবি সহ ৫ জন সাংবাদিক। এ সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধারসহ ওই ৫ সন্ত্রাসীকে আটক করেন ডেমরা থানা পুলিশ।
বিগত ২২ এপ্রিল (সোমবার) দুপুরে, রাজধানীর ডেমরা থানাধীন ইষ্টার্ন হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে সংবাদ সংগ্রহের ফুটেজ নেওয়ার সময় এই অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।
গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত হামলার এক ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা ইষ্টার্ন হাউজিং সোসাইটির ভিতরে সাংবাদিকরা প্রবেশ করার পর অতর্কিত হামলা চালিয়ে সাংবাদিক শরিফুল ইসলামকে রড, বাশ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করছে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মো. মাকসুদুল আলম নামে দৈনিক আওয়ার বাংলাদেশ পত্রিকার এক সাংবাদিক অভিযুক্ত ৮ জনসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যার মামলা নং- ২৮/৪। তারিখঃ ২২/০৪/২৪। এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ধৃত ৫ আসামীকে পরদিন মঙ্গলবার বিকালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। ঘটনার মাত্র ২ দিন পর ২৪ এপ্রিল আটককৃত ৫ সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে চলে আসেন।
এদিকে সাংবাদিকদের মারধরের এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠেছে এলাকায়। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্থানীয় এলাকা, জাতীয় প্রেসক্লাব ও রাজউকের সামনে মানববন্ধন ও সাংবাদিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স কাউন্সিল, জার্নালিষ্ট ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, ডেমরা প্রেসক্লাব, যাত্রাবাড়ী সাংবাদিক ক্লাব, কদমতলী থানা প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
বিআলো/নিউজ