ঢাকার আশুলিয়া থানার নতুন ওসি কে এই ভাইরাল মনিরুল হক ডাবলু?
সীমা আক্তার: বাংলাদেশের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এই ভাইরাল মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু? তিনি বর্তমানে আশুলিয়া থানার ওসি হিসেবে কর্মরত, বাংলাদেশপুলিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ ২০২৫ইং) দুপুরে আশুলিয়া থানায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত সোমবার (৩ মার্চ ২০২৫ইং) দুপুর ২টার দিকে আশুলিয়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ মানিরুল হক ডাবলু। এ সময় থানার কর্মরত (এসআই) অফিসারগণ তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। ওসি থানায় আসার পূর্বে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানানো শুরু করেন, এরপর থানায় ওসি’র দায়িত্ব নিতেই বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে অপপ্রচার শুরু করে কেউ দাবী করেন যে, এই ওসি ছাত্রলীগ করতেন, কেউ দাবী করেন তিনি ছাত্রদল করতেন, মুহুর্তের মধ্যে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হন,আশুলিয়া বাসীর প্রশ্ন: কে এই মনিরুল হক ডাবলু? সে যেখান থেকেই আসুক না কেন তিনি এখন বাংলাদেশ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা-একটি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।
সূত্র জানায়, মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু ১৯৭৮সালে ফরিদপুর-রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি মরহুম আঃ জলিল শেখের ছেলে, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ডাবলু কনিষ্ঠ। মনিরুল হক ডাবলুর বড় ভাই জিয়াউল হক বাবলু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক, মেজ ভাই জহিরুল হক লাভলু বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তিনি বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত সফল সভাপতি। এবার আসি মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু কেমন মানুষ, ছোট বেলা থেকে স্কুলে সবার প্রিয় ভালো ছাত্র ছিলেন, সর্বশেষ শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাসের মধ্য দিয়ে। এরপর বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন অফিসার হিসেবে। এর আগেও তিনি আশুলিয়া থানায় চাকরি করেছেন, তখন শেখ রিজাউল হক দিপু আশুলিয়া থানার ওসি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন এই মনিরুল হক ডাবলু।
বিশেষ করে গত (৩ মার্চ ২০২৫ইং) তারিখে মনিরুল হক ডাবলু নতুন ওসি হিসেবে আশুলিয়া থানায় যোগদানের পর থেকে একটি প্রত্যায়নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মুহাম্মদ মুসলিম হলের একটি কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পদের একটি প্রত্যায়নপত্রও ভাইরাল হয়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী ও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন: কে এই ওসি ডাবলু? তখন এই দুইটি প্রত্যায়নপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানে নামে গণমাধ্যম কর্মীরা। উক্ত বিষয়ে প্রথমেই ছাত্রলীগের কর্মী দবিকৃত প্রত্যায়নপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করতে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারের এমপি সংসদ সদস্যের সাথে নানা ভাবে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর নামের বানান, দুই জায়গায় দুইরকম, (ছাপানো অক্ষরে লেখা মোঃ নজরুল ইসলাম বাবু, সিলে লেখা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু, যা খুবই নিম্নমানের, কোনো এমপি এমন মানের সিল ব্যবহার করার কথা নয়।) অথচ মনিরুল হক ডাবলুকে দেওয়া প্রত্যায়নপত্র তরতাজা মনে করছেন অনেকেই। এরপর ছাত্রদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দাবি করা প্রত্যায়নপত্রের অনুসন্ধান শুরু করলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় অফিসের পিয়ন সুমন নামের একজন ব্যক্তি আশুলিয়া থানায় এসে বলেন যে,ওসি মনিরুল হক ডাবলু নাকি ছাত্রলীগ করতেন তার তদন্ত করতে আসছেন, এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা প্রশ্ন করলে ওই সুমন নামের ব্যক্তি বিপাকে পড়েন, তখন ওসি ডাবলু তার কক্ষে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়।
অন্যদিকে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয়ে মনিরুল হক ডাবলু’র রাজনৈতিক পরিচয় জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মুহাম্মদ মুসলিম হলের সভাপতি একে এম মেজবাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডাবলু ভাই আমার হল কমিটিতে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা একসাথে রাজনীতি করেছি, তখন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাই, ডাবলু ভাই ও আমরা এক সাথে রাজনীতি করছি। এ সময় মেজবাহ উদ্দিন আরো বলেন, ২০০১ সালে মহসিন হলের দখলে ছিলো ছাত্রলীগের শফিকরা। তখন ডাবলু আনিস, হিরু আমরা একসাথে ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। তখন আমাদের উপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে, আমি তখন জেল খেটেছি। আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের প্রত্যায়নপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব ভুয়া।
এদিকে রাজবাড়ীর মনিরুল হক ডাবলু পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় হলো তার বাবা মৃত আব্দুল জলিল মিয়া প্রথমে ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমা শাখার জাগ দলের ও পরে বিএনপি’র সদন্য ছিলেন, ডাবলু’র বড় ভাই মোঃ জিয়াউল হক বাবলু ছিলেন, গোয়ালন্দ পৌর বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও গোয়ালন্দ উপজেলা শাখার জাসাস এর সাবেক সভাপতি। তার মেঝ ভাই মোঃ জহিরুল হক লাভলু গোয়ালন্দ উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি (১৯৯১-১৯৯৬ইং) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু’র সাথে গণমাধ্যম কর্মীরা কথা বললে তিনি বিষয়টি নিয়ে লজ্জায় পড়েন আর কোনো বক্তব্য দেননি। এদিকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের উপর মহলের কর্মকর্তাগণ বলেন, মনিরুল হক ডাবলু কোথায় ছিলেন, কি দল করছেন? কোথায় বাড়ি তা প্রমান হয়েছে, তিনি আশুলিয়া থানায় এর আগেও চাকরি করেছেন, পুলিশের বদলির চাকরি, তার রিজিক যতদিন আশুলিয়া থানায় আছে ততদিনই তিনি থাকবেন।
বিআলো/তুরাগ