তাজরীন ট্র্যাজেডির ১৩ বছর : বিচারের বাণী এখনও নিভৃতে কাঁদে
রতন বালো: সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আগুনে পুড়ে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১১৪ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন এক হাজারের বেশি, পঙ্গুত্ববরণ করেন ১৭২ জন। এত বছর পরও অনেক শ্রমিক–স্বজন ক্ষতিপূরণ পাননি, আর মামলার আসামিরাও চূড়ান্ত বিচারের মুখোমুখি হননি।
ঘটনার পর মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। অভিযোগপত্র দাখিল হয় এক বছর পর, এবং ২০১৫ সালে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। কিন্তু গত ১০ বছরে নির্ধারিত ৬৮টি শুনানির মধ্যে মাত্র ১০ দিনে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পেরেছে। ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
সর্বশেষ ১৯ নভেম্বরও রাষ্ট্রপক্ষ কোনও সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। সেই দিন মামলার প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেনও ‘অসুস্থতা’ দেখিয়ে আদালতে হাজির হননি। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে ২০২৬ সালের ৯ মার্চ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, তারা নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন এবং মামলার সব নথি এখনও হাতে পাননি।
তাজরীনের মালিক ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে মুক্ত হন। মামলার চলমান সময়ে তিনি রাজনৈতিক পরিচিতিও অর্জন করেন। শ্রমিক অধিকারকর্মীদের অভিযোগ—শুনানির দিনে মালিকপক্ষের অনুপস্থিতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে, অথচ রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার।
মানবাধিকারকর্মী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, বিচার বিভাগের কাঠামোগত দুর্বলতা ও সরকারের সহযোগিতার অভাবেই মামলাটি বছরের পর বছর ঝুলে আছে। তার মতে, কিছু রাজনৈতিক মামলায় দ্রুত বিচার হলেও শ্রমিক মৃত্যুর মামলাগুলো গুরুত্ব না পাওয়ায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে।
সরকারি তদন্ত কমিটিগুলোও আগুনের জন্য মালিকপক্ষের ব্যাপক অবহেলাকে দায়ী করেছিল। শ্রমিকদের বের হওয়ার পথ বন্ধ থাকা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি—সবকিছুই ছিল সুস্পষ্ট অবহেলার প্রমাণ।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, তাজরীন দুর্ঘটনার নিহতদের দূরে জুরাইনে দাফন করাও ছিল ঘটনার স্মৃতি মুছে ফেলার প্রয়াস। তিনি বলেন, এত বড় দুর্ঘটনা ও পরবর্তী বহু অগ্নিকাণ্ডের পরও শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণ বা শাস্তির বিধানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি, যা শ্রমিক নিরাপত্তা কতটা উপেক্ষিত—তা স্পষ্ট করে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা-প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ১৩ বছরেও বিচার না হওয়া অগ্রহণযোগ্য। তার দাবি—অন্তর্বর্তী সরকার যেন এই মামলার মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বিআলো/তুরাগ



