তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও মোনাজাত
বিআলো ডেস্ক: তারাবির শাব্দিক অর্থ বিশ্রাম নেয়া। ইসলামের পরিভাষায় তারাবি বলা হয় ‘রমাজান মাসে এশার নামাজের পর বিতরের পূর্বে আদায়কৃত সুন্নত নামাজ। তবে চার রাকাত আদায়ের পর বিরতির মাধ্যমে যে বিশ্রাম নেয়া হয় তাকেও ‘তারাবি’ বলে। ইসলামি শরিয়তে তারাবির নামাজের রয়েছে অনেক ফজিলত।
তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রমজানের রোজা মহান আল্লাহ আবশ্যক করেছেন। যা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। আর তারাবির নামাজ আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চালু করেছেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে তারাবির নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করেছেন।
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. বলেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রমজান মাসের রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য রমজান মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো সুন্নত হিসেবে চালু করেছি। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান ও পুণ্যের আশা নিয়ে এ মাসের রোজা রাখবে ও নফল অর্থাৎ তারাবির নামাজ পড়বে, সে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে। (নাসায়ি, হাদিস: ২২১২)
রমজান মুমিনের ইবাদতের বসন্তকাল। অল্প ইবাদতে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করার জন্যই রমজান। আর মানুষের পাপ মোচনের অন্যতম মাধ্যম হল তারাবির নামাজ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পুণ্যের আশায়, রমজানের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের পাপ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি, হাদিস: ৩৭)
রমজানে দোয়া কবুল ও কোরআন খতমের অনন্য সওয়াব। রমজান কোরআন নাজিলের মাস। রমজানে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরাইল আ. একে অপরকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। পৃথিবীতে তারাবির নামাজে কোটি কোটি বার কোরআন খতম করা হয়।
তাই তারাবির মাধ্যমে কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত ইরবায ইবনে সারিয়া রা. হতে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ পড়লো, তার দোয়া কবুল হয়। আর যে ব্যক্তি কোরআন খতম করলো তার দোয়াও কবুল হয়। (আল-মুজামুল কাবির ৬৪৭)
তারাবির নামাজ রমজানের প্রতীক। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা ও তাবেয়িগণের হাদিস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত। তারাবি আদায় না করা মাকরূহে তাহরীমি। যা প্রায় কবিরা গোনাহের শামিল।
তারাবির নামাজ অন্যান্য নামাজের মতোই। দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে। আবার দুই রাকাত নামাজ পড়বে। ৪ রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নিবে। এভাবে পাঁচ বিরতি দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ পড়বে।
বিশ্রামের সময় তাসবিহ, তাহলিল, দোয়া-দরুদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।
তারাবির নামাজের নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। চার রাকাত পর পর কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়াই পড়া যাবে।
আমাদের দেশে তারাবির নামাজের মোনাজাত হিসেবে একটি মোনাজাতের প্রচলন আছে। বিশ রাকাত নামাজ শেষ করে এ দোয়াটি পড়া হয়। দোয়াটি হলো-
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহ মাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহ মাতিকা ইয়া আরহামার রহিমিন।’
উল্লেখ্য, এটিও প্রচলিত একটি দোয়া। তারাবি নামাজের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
বিআলো/শিলি