তিন ফুট উচ্চতা, পাহাড়সম সংগ্রাম: অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া বাউফলের বজলু হাওলাদারের জীবনযুদ্ধ
মো. তরিকুল ইসলাম (মোস্তফা),বাউফল (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাউফল সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কায়না গ্রামের বজলু হাওলাদার জন্ম থেকেই মাত্র তিন ফুট উচ্চতার মানুষ। বয়স ৫৫ বছর হলেও প্রতিটি দিন তাকে সংগ্রাম করে কাটাতে হয়। সমাজের অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং দারিদ্র্য তাকে আরও অসহায় করে তুলেছে।
জন্মের পর থেকেই অস্বাভাবিক খাটো গড়নের কারণে শৈশবে সহপাঠীদের কটূক্তি ও উপহাসের শিকার হন তিনি। অল্প বয়সেই তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন জায়গায় কাজ খুঁজলেও উচ্চতার কারণে অনেকেই তাকে ফিরিয়ে দেন। তার ভাষায়, “এত ছোট মানুষ কি কাজ করতে পারবে?”—এ ধরনের কথা তিনি নিয়মিত শুনেছেন। জীবনের কষ্টই তাকে পরিশ্রমী করেছে, কিন্তু সুযোগ কেউ দেননি।
উচ্চতা কম হওয়ায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত ব্যথা, হাঁটাচলায় কষ্ট এবং দুর্বলতা তার দৈনন্দিন জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে। তিনি জানান, চিকিৎসা করার মতো অর্থ তার নেই। “ডাক্তারের কাছে যাবো কী দিয়ে? ওষুধ কেনার টাকাও তো জোটে না।” বলেন বজলু। দিনের তিনবেলার খাবারও অনেক সময় জোটে না।
বজলুর সবচেয়ে বড় কষ্ট মানুষের অবহেলা। রাস্তায় বের হলেই অনেকে তাকায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে, কেউ হাসাহাসি করে, কেউ আবার তাকে মানুষ হিসেবেও গণ্য করতে চায় না। তিনি বলেন, “মানুষের অবহেলাই আমাকে সবচেয়ে বেশি কাঁদায়।”
এত কিছু সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের একটি ছোট টং দোকান চালিয়ে কোনোভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করছেন। তিনি আশা করেন, সমাজ একদিন তাকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেবে, কাজের সুযোগ দেবে এবং সহায়তার হাত বাড়াবে।
স্থানীয়দের মতে, সামান্য মানবিক সহায়তা পেলে এই সংগ্রামী মানুষের জীবন অনেকটাই বদলে যেতে পারে। কায়না গ্রামের খাটো গড়নের হলেও বড় মনের মানুষ বজলু হাওলাদার মানবিকতার স্পর্শের অপেক্ষায় আছেন।
বিআলো/ইমরান



