দুর্নীতি প্রতিরোধে চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়: কৃষি সচিব
তিন বছর পর পেঁয়াজ–আদা আমদানি লাগবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ ও আদা আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে কৃষি খাতে বিভিন্ন প্রকল্পে অপচয় ও দুর্নীতি কমিয়ে এক বছরে চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে কৃষি অর্থনীতি কোনোভাবেই টেকসই হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী সেমিনারে এসব কথা বলেন কৃষি সচিব। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘কৃষির রূপান্তর: দেশীয় উপযোগী কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানি চ্যালেঞ্জ’।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদ।
কৃষি সচিব জানান, কৃষিকে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক করতে ২৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যার চূড়ান্ত খসড়া ডিসেম্বরেই প্রস্তুত হবে। তিনি বলেন, সারে বছরে ২–৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের পরিকল্পনা। চলতি বছর সারে ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়। যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে ৬০০ কোটি টাকা ফেরত। প্রকল্পে দুর্নীতি কমিয়ে ২৫০০ কোটি টাকা ফেরত। মোট মিলিয়ে গত বছর চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে সমালোচনা অযৌক্তিক: সচিব
সবজির দাম ১০০ টাকা হলে কেউ প্রশ্ন না তুললেও পেঁয়াজ ১০০ টাকা হলে দেশে সমালোচনা শুরু হয়—এমন মন্তব্য করে সচিব বলেন, “কৃষককে কি পেঁয়াজের দাম দিতে হবে না?”
তিন বছরের মধ্যে আদা ও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি।
আলুর দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
‘কৃষিকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অংশ করতে হবে’—বিএজেএফ সভাপতি
বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল থাকতে হবে। কৃষিকে টেকসই করতে প্রাতিষ্ঠানিক নীতি ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন জরুরি।
কৃষিযন্ত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সম্ভব—ব্রি
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি–র প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ও জাপানের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে মানসম্পন্ন কৃষিযন্ত্র উৎপাদন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। এটি সময়, শ্রম এবং খরচ সাশ্রয়ে বড় সহায়ক হবে।
ব্রি–র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুরুল হুদা বলেন, আধুনিক কৃষিযন্ত্র তৈরির প্রধান বাধা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের দুর্বলতা। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে কোনো রাষ্ট্রীয় ইঞ্জিন কারখানা গড়ে ওঠেনি।
কৃষিকে লাভজনক পেশা করতে হবে—পিকেএসএফ
পিকেএসএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, শুধু উৎপাদন নয়, কৃষিকে লাভজনক ও মর্যাদাপূর্ণ পেশায় পরিণত করাই এখন মূল লক্ষ্য। পিকেএসএফ–এর সহযোগী সংস্থাগুলো বছরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করছে, যার ৪০% কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। দেশের মোট কৃষি অর্থায়নের ৮৫% এমএফআই সেক্টর থেকে আসে।
ধান উৎপাদনে বিপ্লব—ব্রি মহাপরিচালক
ব্রি–র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আধুনিক জাত ব্যবহারের ফলে দেশে এখন প্রতি হেক্টরে অনেক স্থানে ৮–১০ টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। ভবিষ্যতে গড় ফলন ১০ টনেরও বেশি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আম রপ্তানিতে তিন গুণ প্রবৃদ্ধি—প্রকল্প পরিচালক
রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছরে আম রপ্তানি ৩ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ৩৮ দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে। তবে বিমান ভাড়া ও পরিবহন সংকট রপ্তানির বড় বাধা। তিনি বিমানে কৃষিপণ্যের জন্য নির্দিষ্ট কোটা বরাদ্দের দাবি জানান।
চার দিনের এ সম্মেলনে কো-স্পন্সর হিসেবে ছিল আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সহযোগী প্রতিষ্ঠান—
এসিআই এগ্রিবিজনেসেস, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ, লাল তীর সিডস, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (বাংলাদেশ), ব্রি, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
বিআলো/এফএইচএস



