দেশি মাছের আকাল, ভালো নেই পাবনার মৎস্যজীবীরা
এস এম আলমগীর চাঁদ, পাবনা: পাবনার বিভিন্ন জলাশয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে মিঠাপানির দেশি মাছ। জনসংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে মাছের সরবরাহ। বাজারে দেশি মাছের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি এখন কাগজে–কলমেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
এ অঞ্চলে বহু মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন নদী-নালা ও খালবিলে পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সারাদিন জাল ফেলেও যে মাছ পাওয়া যায়, তাতে সংসার চালানো তো দূরের কথা নিজের খরচই ওঠে না অনেকের।
মৎস্য বিভাগের দাবি, খোলা জলাশয়ে মাছ কমলেও বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ বাড়ছে। এতে স্থানীয়দের পুষ্টিতে ঘাটতি হবে না বলে তারা জানিয়েছেন।
একসময় পাবনার নদী, খাল, বিল ছিল দেশি মাছের ভান্ডার। বাঈম, কালবাউস, চিতল, পাবদা, রিটা, টাকি, ভেদা, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিং, মাগুর, কই, চান্দা, ট্যাংরা, পুঁটি, বাইল্লা, বাতাসি, সরপুটি—এভাবে হাজারো প্রজাতির মাছ এ অঞ্চলে প্রচুর ছিল। স্বাদের জন্য এসব মাছ দেশব্যাপী ছিল জনপ্রিয়। কিন্তু এখন সেই ভান্ডার শূন্য হয়ে পড়ছে। অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, আগের তুলনায় নদী-খালে এখন চার ভাগের এক ভাগ মাছও নেই। সারাদিন জাল ফেলেও ৩০০ টাকার মতো মাছ ওঠে না। মাছের অভাবে ঘাটে সারাদিন বেকার পড়ে থাকে তাদের নৌকা। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
মাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জেলেরা ও স্থানীয়রা বলেন, সময়মতো পানি না আসা, পোনা নিধন, অবৈধ দুয়ারী জাল ব্যবহার, জলাশয় ভরাট, কীটনাশকের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, কলকারখানার বর্জ্য এবং জলাশয় সেচ দিয়ে মাছ ধরা—এগুলোই মূল কারণ।
ফরিদপুরের জেলে পলান হালদার, বিকাশ হালদার, আলামিন প্রতিক মিয়া, রমজান মিয়া জানান, একসময় ডুব দিয়ে মাছ ধরতেন তারা। বাজারে মাছ এত বেশি থাকত যে কিছু মাছ ব্যবসায়ীরা কিনত না। সেই মাছ আবার নদীতে ফেলে দিতে হতো। এখন মাছ তো দূরের কথা—মাছের গন্ধও মেলে না।
সাথিয়ার জেলে শাহাদত, জালাল উদ্দিন ও ছাদের মিয়া বলেন, ১৫–২০ বছর আগে এক ঘণ্টা জাল টানলে এক থেকে দেড় মণ মাছ পাওয়া যেত। এখন সারাদিন পরিশ্রম করেও তার সিকিভাগও ওঠে না।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা ৪০–৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করেন, কিন্তু এমন মাছের আকাল দেখেননি। বাজারে দেশি মাছের আমদানি আগের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। চাষের মাছ থাকলেও দেশি মাছের সংকট দিন দিন বাড়ছে।
পাবনা জেলা মৎস্য অফিস জানায়, খাল–বিল–নদীতে দেশি মাছের ঘাটতি থাকলেও, ঘাটতি পূরণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে দেশি মাছের সংকট অনেকটা কমে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
বিআলো/ইমরান



