ধর্ষণ মামলায় অধ্যক্ষ ড. মারুফ কারাগারে
রাজশাহী ব্যুরো: ধর্ষণ মামলায় রাজশাহীর হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–১-এর বিচারক। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে আদালতে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক শরনিম আক্তার।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. শরিফুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তদন্তে জব্দ করা আলামত এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩)–এর ৯(১) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যক্ষ মারুফ হোসেনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযুক্ত মারুফ নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ফুদকিপাড়া খিরশিন এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে।
২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল একই কলেজের এক নারী প্রভাষক বোয়ালিয়া মডেল থানায় অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেনকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মারুফ মামলার বাদির আপন মামাতো ভাই এবং পেশাগত কারণে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ভুক্তভোগীর বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করেন মারুফ। পরে বিষয়টি কাউকে জানালে চাকরির ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন। অভিযোগে বলা হয়, ওই ঘটনার পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় সাত বছর ধরে ওই নারী প্রভাষকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যান তিনি। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের কথা বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। কর্মক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জবাব তলবসহ নানা হয়রানির অভিযোগও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী প্রভাষক তৎকালীন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান সভাপতি এবং কারিগরি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযুক্ত মারুফ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয়–স্থানীয় নেতাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন তার বাবা আমজাদ হোসেন, আর আত্মীয়–স্বজন ছিলেন সদস্য। এতে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান অধ্যক্ষ মারুফ। পরে ২০২৩ সালের ৮ মে তিনি উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। জামিনের মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–১-এ হাজির হয়ে হজে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট মামলাটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এলে তিনি সেখানে বদলি জামিন নেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিতে থাকেন।
সর্বশেষ আজ ২৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি আবার জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল ইসলাম জানান, উভয় পক্ষের যুক্তি–তর্ক শুনে আদালত এ সিদ্ধান্ত দেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতেও ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী নারী প্রভাষক বলেন, আদালতের আদেশে আমি সন্তুষ্ট। এই আসামির সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত হবে বলে আমি আশাবাদী।
বিআলো/ইমরান



