নীলফামারীতে আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু, চাষিরা আশাবাদী
নাজমুল হুদা, নীলফামারী: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম জাতের আলু উত্তোলন। মাঠে এখন কৃষকদের ব্যস্ত সময়। নতুন উঠতি আলু কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই চাষিদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলাজুড়ে আলু উত্তোলন পূর্ণমাত্রায় শুরু হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে কিশোরগঞ্জে আগাম আলু উত্তোলন হয়। স্থানীয় সেভেন জাতের আলু মাত্র ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে সংগ্রহযোগ্য হয়ে ওঠে। তিনি জানান, কেশবা গ্রামের কৃষক সোরহাব হোসেন ৫৯ শতক জমিতে সেভেন জাতের আগাম আলু তুলেছেন এবং ৩৫০ কেজি ফলন পেয়েছেন। যেহেতু আলুর আকার ছোট, তাই কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি দপ্তর জানায়, গত মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপক লোকসান সত্বেও আগাম আলু চাষ থেকে পিছপা হননি। নতুন আলু বাজারে তুললেই ভালো দাম পাওয়ায় এ অভিজ্ঞতাই তাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এ বছর উপজেলায় ৬,৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩,৪৩০ হেক্টর আগাম জাতের আওতায় রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজ আলুচারা সমানভাবে বেড়ে উঠেছে। দুর্গাপূজার আগে কিছু জমিতে বৃষ্টি কর্দমাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। চাষিরা মনে করছেন, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে ফলন ভালো হবে।
নীতাই মুশরুত পানিয়ালপুকুর এলাকার কৃষক আল-আমিন জানান, তিনি ৭০ বিঘা জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেছেন। আলুর বয়স এখন ৩৫-৫০ দিন। বাজারদর নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আগাম আলুর ভালো দাম হলে তিনি বড় ধরনের লাভের আশা করছেন।
কৃষক লুৎফর রহমান লুতু মিয়া বলেন, “গতবার হিমাগারে রাখা প্রায় ছয় হাজার বস্তা আলু বিক্রি করে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল। তারপরও ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু করেছি। আরও ৩০ বিঘা জমিতে বীজ আলু চাষ করব। ফলন ও দাম ঠিক থাকলে লোকসান পুষিয়ে লাভ করতে পারব।”
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কিশোরগঞ্জে আগাম আলু কিনতে আসছেন। স্বল্প সময়ে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগাম আলু চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা প্রতি বছর আগ্রহ হারান না।
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর উপজেলায় প্রায় ১,৬০,০০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। আগাম আলুর উৎপাদন ও দাম উভয়ই কৃষকদের মুখে হাসি উপহার দেবে বলে আশা করছি।”
এখনো অনেক কৃষক আমন ধান উঠোনে তুলতে না তুলতেই একই জমিতে আলুর বীজ রোপণ শুরু করেছেন। ঘরে ঘরে গজানো বীজ শোভাবর্ধন করছে। ১৫-২০ দিনের গজানো বীজ রোপণ করলে ৫০ দিনের মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষণযোগ্য হয়ে ওঠে- এ তথ্য জানিয়ে কৃষি বিভাগ চাষিদের সময়মতো মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছে।
আগাম আলু উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের চাষিদের মধ্যে নতুন আশা জেগেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও ন্যায্য বাজারদর অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে তারা লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন- এমনটাই বলছে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা।
বিআলো/শিলি



