নেকির মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়
মাস্টার রফিকুল ইসলাম রানা
বর্তমান এই যুগে একজন মানুষ কখনো গুনাহ ছাড়া থাকতে পারেন না। ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজের সাথে লিপ্ত হয়ে যায়। কাল কেয়ামতের ময়দানে কঠিন বিপদের মূহুর্তে একটি নেকির জন্য এক প্রন্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াবে কিন্তু কোন নেকি পাবে না। সন্তান মা বাবাকে চিনবে না, মা বাবা সন্তানকে চিনবে না এই কঠিন বিপদে পতিত হওয়ার পূর্বেই নেক আমল করে গুনাহ মুক্তিপেতে হবে তানাহলে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন ভোগ করতে হবে।
বেশি বেশি সিজদা করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ঃ মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবি (রহ.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আজাদকৃত গোলাম সাওবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা আমি তাঁকে প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনো চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৮)
তাওবা করা মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ঃ তাওবা করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা সুরা ফুরকানের ৭০নাম্বার আয়াতে বলেন, তারা নয়, যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গুনাহগুলো পরিবর্তন করে দেবেন নেকি দিয়ে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ভালো কাজ করার মাধ্যমে গুনাহ মাফঃ মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাজ করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কাজ মুছে ফেলে মন্দ কাজ। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১১৪)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবু জার (রাঃ)- কে বলেন, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। আর মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)
অজু করে মসজিদে যাওয়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফঃ উত্তমরূপে অজু করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি মাফ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, নামাজের জন্য বেশি পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক (ওয়াক্ত) নামাজের পর আরেক (ওয়াক্ত) নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)।’ (সহিহ মুসলিম ৪৭৫)
দান-সদাক্বাহ্ করার মাধ্যমে গুনাহ মাফঃ দান-সদাক্বাহ্ একদিকে যেমন আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার ও তাঁর ক্রোধ প্রশমনের মাধ্যম তেমনি তা দাতার গুনাহ মাফেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। দান-খয়রাত করলে পাপ ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা সুরা বাকারার ২৭১ নাম্বার আয়াতে বলেন: ‘‘তোমরা যদি সদাক্বাহ্ প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে ‘আমল কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’’
দুইজন ভাই একত্রে মিলিত হয়ে মুসাফাহা করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ঃ মুসাফাহা করার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের আলাদা হওয়ার আগেই তাদের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১২)
জুমআর সালাতের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ঃ সালমান ফারসি (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মধ্যে ফাঁকা করে না, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তার সে জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
দোয়ার মাধ্যমেগুনাহ মাফ হয়ঃ , ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর দশ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির পড়বে বিনিময়ে তার আমলনামায় চারজন গোলাম আজাদ করার সওয়াব লেখা হবে দশটি নেকি লেখা হবে দশটি গুনাহ মাফ হবে দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং এ দোয়াগুলো সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য শয়তান থেকে রক্ষার কারণ হবে। মাগরিবের পর পড়লে অনুরূপ সওয়াব মিলবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৫১৮)
দুরুদ পাঠের মাধ্যমে গুনাহ মাফঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসর নামাজের পর ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার এই দুরুদ শরিফটি পাঠ করবে, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’ তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে।’ (আফদালুস সালাওয়াত-২৬)
সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় হওয়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফঃ সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় আচরণ করার দ্বারাও গুনাহ মাফ হয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও তার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার আমল কবুল করেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকি আছে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
এছাড়াও আরো আসংখ্য আমল দ্বারা গুনাহ মাফ করানো যায় সংক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে নেক আমল গুলো করে যাতে করে আমাদের পাপ রাশি গুলো ক্ষমা করাতে পারি। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুক আমিন।
লেখকঃ তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ শাখা।