নেপালে আটক সিয়াম কলকাতা সিআইডির হেফাজতে
নিজস্ব প্রতিবেদক: এমপি আনার হত্যায় অভিযুক্ত নেপালে পালিয়ে থাকা সিয়ামকে কলকাতা সিআইডি হেফাজতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিন একথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নেপালে গ্রেপ্তার আসামি সিয়াম কলকাতার সিআইডির হেফাজতে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুইদেশের তদন্তের ভিত্তিতে, সমঝোতার ভিত্তিতে মামলার বিচার সম্পন্ন হবে।’
আনার হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সিয়াম নেপাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এ তথ্য আগেই জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
গত ৪ জুন নেপাল থেকে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিয়াম নেপালে গ্রেপ্তার আছেন। তাকে ভারতীয় পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিতে চায়। তাকে কোন দেশের হাতে দেয়া হবে তা নেপাল পুলিশের উপরে নির্ভর করছে।’
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। ২২ মে কলকাতা পুলিশ জানায়, আজীম খুন হয়েছেন। একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় একই দিন আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরুর পর আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে আজীমের মরদেহ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতে মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুই দেশের পুলিশ। এরমধ্যে ডিবির হেফাজতে আছে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলেস্তা রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। আর কলকাতা পুলিশের হেফাজতে আছেন জিহাদ হাওলাদার। এখন এ তালিকায় যুক্ত হলেন সিয়াম।
গত রোববার সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত।
শিমুল, সেলেস্তা ও তানভীর এরই মধ্যে এমপি আজীমকে অহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন আমেরিকা পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার জিহাদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আজীমের মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি মূলত সে–ই করেছে।
তদন্তের অংশ হিসেবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি কলকাতায় যায়। গত ২৮ মে বিকেলে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি মাংসের টুকরা উদ্ধার করে ডিবি ও কলকাতা সিআইডির যৌথ দল। সে সময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি আজীমের দেহাবশেষ। ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে পরে জানা যাবে এটি তাঁর দেহাংশ কিনা।
উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজিম আনার ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম আনার আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।
ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
এর আগে গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। সেখানে ১৩ মে তাকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি।
বিআলো/শিলি